লাল কিলার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩, এনআইএ হাতে তদন্ত, রাজধানীজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
দিল্লির লাল কিলা সংলগ্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের পর মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) সকাল থেকে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার ওই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং অন্তত ৩০ জন আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের মতে, বিস্ফোরণটি একটি সাদা রঙের Hyundai i20 গাড়িতে ঘটে, যা দীর্ঘ সময় ধরে ঘটনাস্থলের কাছে পার্ক করা ছিল। বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি, দোকান ও রাস্তার অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, গাড়ির ভেতরে উচ্চক্ষমতার বিস্ফোরক রাখা ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের কিছু সময় আগে এক ব্যক্তি গাড়িটি পার্ক করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। এর পরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে, এবং আগুনে আশেপাশের এলাকা মুহূর্তে জ্বলে ওঠে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে RDX-এর মতো বিস্ফোরক উপাদানের নমুনা পাওয়া গেছে, যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) ইতিমধ্যেই ঘটনাটির তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। তদন্তকারীরা গাড়িটির নিবন্ধন নম্বর, মালিকানা ও সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে মাটির নমুনা, পোড়া ধাতব অংশ ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে। দিল্লি পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, এই বিস্ফোরণ কোনো একক ব্যক্তি বা সংগঠিত গোষ্ঠীর পরিকল্পনা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনাটিকে “জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে এক গুরুতর আঘাত” বলে উল্লেখ করে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজস্থান রাজ্যগুলোতে এখন উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, মেট্রো স্টেশন, বিমানবন্দর এবং পর্যটনকেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে, গুজবে কান না দিতে ও সন্দেহজনক বস্তু বা গাড়ি দেখলে পুলিশকে দ্রুত জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনও (DMRC) লাল কিলা মেট্রো স্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে এবং আশেপাশের স্টেশনগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষা চালাচ্ছে।
চাঁদনী চক ও লাল কিলা এলাকার দোকানপাট আজও আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক দোকানদার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং বাজারের ফুটফল প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।
রাজনৈতিক মহল থেকেও এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিরোধী দল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে—কীভাবে এমন সংবেদনশীল এলাকায় এত বড় নিরাপত্তা ফাঁক রয়ে গেল। অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, “সরকার কোনোভাবেই দোষীদের ছাড় দেবে না, দোষীরা শাস্তি পাবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিস্ফোরণ ভারতের মহানগরগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এক গুরুতর সতর্ক সংকেত। অতীতে দিল্লি, মুম্বাই বা হায়দরাবাদে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তবে লাল কিলার মতো উচ্চ-নিরাপত্তা এলাকাতেও এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারা গোটা সিস্টেমকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিস্ফোরণের পূর্ণ ফরেনসিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। তদন্তকারীরা এখন গাড়ির উৎস, রুট ম্যাপ ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির যোগাযোগের সূত্রে সম্ভাব্য গোষ্ঠী শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। পুরো ঘটনাটি ঘিরে গোটা দেশেই এখন গভীর উদ্বেগ ও শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন