Top News

জগৎ জোড়া " জিবলি" ! বিগত ২০ বছরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে আনাচে কানাচে - রইল বিস্তারিত

ফেসবুকের ওয়াল হোক হোয়াটসঅ্য়াপের স্টেটাস, গত কয়েকদিন ধরে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যাচ্ছে এক বিশেষ ধরনের কার্টুন। যা আদপে আমার-আপনারই সাধারণ ছবির প্রতিবিম্ব। এক ক্লিকেই ‘ডিজিটাল আর্ট’ ভাল করে দিচ্ছে মন। নেপথ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেপথ্যে ‘স্টুডিয়ো ঘিবলি’। বিগত কয়েকদিনে এই একটা নামই কার্যত ট্রেন্ডিং খাতায় এক্কেবারে এক নম্বরে। ‘ঘিবলি’ জ্বরে ভুগছে নেটিজেনরা। কিন্তু, এই ‘ঘিবলি’? কী বলছে ইতিহাস?

জিবলি কী?
জিবলি আসলে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিয়োর নাম। যার জন্ম হয় ১৯৮৫ সালে, জাপানের টোকিয়োতে। উজ্জ্বল জলরং অথবা অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে হাতে আঁকা হত ওই স্টুডিয়োর সমস্ত অ্যানিমেশন। খামখেয়ালি কল্পনায় আঁকা সেই সমস্ত ছবি থেকে ফুটে বেরোত অজানা সুখানুভূতি। সম্ভবত সেই বিষয়টিই দর্শকদের মন টানে। জাপানের ওই অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা জাপানের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছোয় অ্যানিমেশনের আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। ওয়াল্ট ডিজ়নি অংশীদারির প্রস্তাব দেয় জিবলি স্টুডিয়োকে। কার্টুন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে জিবলি।
জিবলি নামের অর্থ কী?
জিবলি নামের নানা রকম অর্থ হয়। নানা দেশে এর ব্যবহারও রয়েছে। তবে জিবলি শব্দটির সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ মেলে আরব দেশে। আরবি শব্দ ‘জিবলি’ ব্যবহার করা হয় সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত এবং শুষ্ক হাওয়াকে বোঝানোর জন্য। জিবলি স্টুডিয়োর তিন প্রতিষ্ঠাতার প্রধান যিনি, সেই জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজ়াকি অবশ্য ওই নাম বেছে নিয়েছিলেন ইটালির একটি বিমানের নাম থেকে।
বিমানের নামে কার্টুন!
ক্যাপ্রোনি কা.৩০৯ নামের ওই বিমান ছিল সাহারা মরুভূমিতে ইটালির নজরদারি চালানোর বিমান। সেই বিমানের নামও ছিল জিবলি (ইটালীয় উচ্চারণে গিবলি)। বিমান নিয়ে আগ্রহী মিয়াজ়াকি সেই নাম জেনেছিলেন। নামের মানে জেনে আরও ভাল লেগেছিল তাঁর। নিজের স্টুডিয়ো তৈরি করার সময় তাই বেছে নিয়েছিলেন সেই নামই। জাপানি উচ্চারণে যা হয়েছিল জিবলি। মিয়াজ়াকি চেয়েছিলেন, জিবলি তার নামের অর্থের মতোই অ্যানিমেশনের দুনিয়ার পালে নতুন হাওয়া নিয়ে আসুক।

জনপ্রিয়তা
জিবলির জনপ্রিয়তা কতখানি, তার একটি হিসাব দেওয়া যাক। গত ৩৮ বছরে হাতেগোনা ২২টি ছবি তৈরি করেছে জিবলি স্টুডিয়ো। টেলিভিশনের জন্য বানিয়েছে ৩টি ছবি। আর সেই সব ছবির প্রত্যেকটিই অ্যানিমেশন দুনিয়ায় আদৃত। জাপানের যে প্রথম দশটি ছবি আজও ব্যবসা দেয় এবং সর্বকালের সেরা ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে চারটিই জিবলি স্টুডিয়োতে তৈরি। জিবলির ছবি অস্কার, গোল্ডেন বিয়ার, বাফতা, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও জিতেছে একাধিক বার। ২০২৪ সালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির শিরোপা উঠেছে জিবলি স্টুডিয়োরই তৈরি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ ছবির মাথায়। জিবলির তৈরি ছবি ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ হল প্রথম ‘নন-ইংলিশ’ অ্যানিমেশন ছবি, যা মূল বিভাগে অস্কার জেতে। ২০২১ সালে জিবলির জনপ্রিয়তা দেখে টোকিয়োয় জিবলি মিউজ়িয়ামও তৈরি হয়। জিবলির দৌলতে মিয়াজ়াকি ২০২৪ সালে এশিয়ার ‘নোবেল প্রাইজ়’ র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারও পান।
জিবলির ট্রেন্ড
সম্প্রতি ওপেন এআই-এর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীরা দেখতে পান, তাঁরা তাঁদের ছবি জিবলি অ্যানিমেশনে বদলে নিতে পারছেন। বিষয়টি জানার পরেই চ্যাটজিপিটির নতুন সুবিধাটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই জিবলি আর্টের কথা তাঁদের মাথায় আসে। ওই প্রযুক্তি প্রকাশ্যে আনার পরেই চাহিদা তুঙ্গে ওঠে চ্যাটজিপিটির। অল্টম্যানের কথায়, ‘‘জিবলি ছবির চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে চ্যাটজিপিটির গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিটের এখন-তখন দশা। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করা হয়েছিল তা যে সফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।’’

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন