গোয়েন্দা বলতেই প্রথমেই উঠে আসে ‘ফেলুদা’, ‘ব্যোমকেশ’ অথবা ‘শার্লক হোমস’-এর কথা। তিন জনেরই এক জন করে সহকারী রয়েছে। কিন্তু জটিল রহস্য ভেদ করতে মহিলাদের তেমন কোনও ভূমিকা নেই। যদিও শার্লক হোমসের বোন অর্থাৎ ‘ইনোলা হোমস’-কে নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবি। যদিও সেই ভাবে মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র নিয়ে এখনও আলোচনা হয় না। সেই ছক ভাঙতে এ বার গোয়েন্দা চরিত্রে নিজের নাম লিখিয়েছেন সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিরিজ়ের নাম ‘ডিটেকটিভ চারুলতা’।
শান্তশিষ্ট ভাবমূর্তি অভিনেত্রীর। তিনি নিজেও তা স্বীকার করেন। তারই সঙ্গে সুগায়িকা। তিনি ডাকাবুকো গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমনকি বেশ কিছু লড়াইয়ের দৃশ্যেও দেখা যাবে তাঁকে। সে জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। আনন্দবাজার ডট কমকে সুরঙ্গনা বলেন, “যাঁরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন তাঁরা মার্শাল আর্টে দক্ষ। অনেকটা সাহায্য করেছেন এই সব দৃশ্যে। ছবিতেও লড়াইয়ের দৃশ্যে ওঁরা অভিনয় করেছেন বলে আমাদের সুবিধা হয়েছে। কারণ আমি এমনিতে একেবারেই মারকুটে ধরনের নই। আমাকে দেখলে সবাই বলে, শান্তশিষ্ট বাধ্য মেয়ে। সেই ভাবমূর্তি ভেঙে কাজ করতে ভাল লেগেছে আমার।”
তবে গোয়েন্দা হয়ে উঠতে গিয়ে আলাদা করে পুরুষালি হয়ে ওঠার চেষ্টা করেননি সুরঙ্গনা। অভিনেত্রী মনে করেন, নারীসুলভ আদবকায়দা নিয়েও শক্তিশালী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা যায়। সুরঙ্গনা বলেন, “এই বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেছিলেন মার্শাল শিল্পী প্রাজ্ঞদা। তিনি আমাকে স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘যখন কাউকে মারছ, বা নিজেকে বাঁচাচ্ছ আক্রমণের হাত থেকে, সেটা কিন্তু পুরুষের মতো করার চেষ্টা কোরো না।’ আসলে শক্তিশালী কাজ বা লড়াই করা কেবল পুরুষের দায়িত্ব, এটা আমাদের মাথায় গেঁথে গিয়েছে। তাই আমরা মারার সময়ে পুরুষালি হওয়ার চেষ্টা করি। কারণ একজন মহিলাও মারধর করতে পারেন। আর এখন পুরুষালি ও নারীসুলভ আচার আচরণের সংজ্ঞাগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। আমাকে বলেই দেওয়া হয়েছিল, তোমার নারীসুলভ আচরণই কিন্তু তোমার শক্তি।”
বলা হয়, মহিলাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বা অন্তর্দৃষ্টি সহজাত ভাবেই নাকি শক্তিশালী হয়। তবে এমন সাধারণীকরণ করতে রাজি নন সুরঙ্গনা। তাঁর কথায়, “আসলে লিঙ্গনির্বিশেষে যে কোনও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে কোনও মানুষেরই থাকতে পারে। সেই জন্যই এই কাজটা করতে চেয়েছিলাম। কারণ গোয়েন্দা চরিত্রে এক মধ্যবয়স্ক পুরুষকে না ভেবে এক মহিলাকে ভাবা হয়েছে। আমি নিজেও বিষয়টিকে গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে ভাবিনি। আমি কেবল একটা চরিত্র হিসেবেই দেখেছি। চরিত্রটি খুবই আত্মবিশ্বাসী, নাকউঁচু ধরনের বলা যায়। কিন্তু তার পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা প্রবল। ঘটনাচক্রে এই চরিত্র গোয়েন্দার।”
বাস্তব জীবনেও সুরঙ্গনা পর্যবেক্ষণ করতে ভালবাসেন। নিজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ও শক্তিশালী বলে মনে করেন। তাঁর কথায়, “আমার অন্তর্দৃষ্টি শক্তিশালী তো বটেই। আসলে যে কোনও অভিনেতার কাজই হল ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে ভালবাসতাম আমি। পরে বুঝলাম, অভিনয় পেশায় সেটা সাহায্য করে। এটা ‘চারুলতা’র সঙ্গে আমার মিল, দু’জনেই পেশার কারণে পর্যবেক্ষণ করতে ভালবাসে।”
নারী-পুরুষ লিঙ্গসমতার কথাও বলেন সুরঙ্গনা। অভিনেত্রী মনে করেন, দু’জনেরই ভিন্ন শক্তি থাকে। তাঁর কথায়, “লিঙ্গসাম্য মানে কিন্তু একজন নারীকেও ২০০ কেজির ডাম্বল তুলতে হবে, এমন নয়। বৌদ্ধিক সাম্য যেন থাকে। কোনও কোনও পুরুষের মধ্যে সত্যিই তথাকথিত নারীসুলভ আচরণ থাকে। আবার মহিলাদের ক্ষেত্রেও অনেকের মধ্যেই প্রাকৃতিক ভাবেই পুরুষালি আচরণ থাকতে পারে। কিন্তু কোনও চরিত্রকে শক্তিশালী দেখানোর জন্য পুরুষালি করে তোলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতেই সবচেয়ে বড় উদাহরণ রয়েছে। মা দুর্গা তো খুবই স্ত্রীসুলভ। তিনি শক্তিশালীও। তাঁকে আমরা চরিত্র হিসেবেই কত বড় করে উদ্যাপন করি।” জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই সিরিজ় মুক্তি পাবে ১০ এপ্রিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন