বিক্ষোভে পুলিশের লাথির দৃশ্য
রাজ্যজুড়ে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি ও চাকরি বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরেই রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC উত্তীর্ণ বহু পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার সেই আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয় কসবা থানার সামনে। বিক্ষোভরত চাকরি হারানো পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভে আচমকাই বলপ্রয়োগ করে পুলিশ। শুধু ধাক্কাধাক্কি নয়, আন্দোলনকারীদের লাথি মারা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রতিবাদকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁরা সকাল থেকেই কসবা থানার সামনে বসে আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং তাঁদের সমস্যা নিয়ে থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। কিন্তু বেলা বাড়তেই আচমকা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নামে তাঁদের টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দেয়। একাধিক আন্দোলনকারীকে লাথি মারার ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ কর্মীরা কয়েকজন আন্দোলনকারীকে ধাক্কা দিচ্ছেন এবং একাধিক ক্ষেত্রে তাঁদের পায়ে লাথিও মারছেন।
ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য রাজনীতিতেও। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নিয়ে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজার থেকে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্তাদের কাছে ঘটনার লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কেন পুলিশের পক্ষ থেকে এমন আচরণ করা হল, তা জানতে বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
প্রতিবাদকারীদের এক প্রতিনিধি বলেন, “আমরা তো কোনও রাজনৈতিক দলের হয়েও নই, কোনও হিংসা ছড়াইনি। শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলাম। তবুও আমাদের টেনে হিঁচড়ে সরানো হল, এমনকী লাথিও মারা হল। এটা কি আমাদের প্রাপ্য?”
আরও একজন বলেন, “আমরা তো আইনের পথেই আমাদের দাবি জানাচ্ছি। তাহলে পুলিশ আমাদের শত্রু হয়ে উঠল কেন?”
এই ঘটনা ফের একবার প্রশাসনের ভূমিকা ও পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। নাগরিকদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। সেখানে পুলিশি বলপ্রয়োগ, বিশেষত লাথি মারার মতো দৃশ্য জনসাধারণের মনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।
এই ধরনের ঘটনা কেবলমাত্র প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে না, বরং অসন্তুষ্ট যুব সমাজকে আরও বেশি ক্ষিপ্ত করে তোলে। ইতিমধ্যেই SSC দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে। তার উপরে এই ধরনের পুলিশি আচরণ সেই ক্ষোভকে আরও উস্কে দিচ্ছে।
লালবাজারের জবাবদিহির নির্দেশ এই ঘটনার একটা প্রাথমিক প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া হলেও, আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো এবং তাঁদের অভিযোগের সঠিক তদন্তই পারে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে। অন্যথায়, এই আন্দোলন আরও বিস্তার লাভ করতে পারে, যা প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখন অপেক্ষা শুধুই জবাবের।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন