কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্র সরোবর বর্তমানে গুরুতর পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখি। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সরোবরটির নীচে পলির স্তর বিপজ্জনক হারে বাড়ছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে জলাশয়ের গভীরতা এবং হুমকির মুখে পড়ছে এখানকার জীববৈচিত্র্য ও জলধারা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (KMDA) পরিচালিত এক Bathymetric জরিপে উঠে এসেছে যে, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে রবীন্দ্র সরোবরের গড় গভীরতা ৩.২ মিটার থেকে কমে ৩ মিটারে দাঁড়িয়েছে। পূর্বে যেখানে সবচেয়ে গভীর অংশ ছিল ৫.১ মিটার, তা এখন ৪.৯ মিটারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া সরোবরের প্রায় ২৮ শতাংশ এলাকা এখন "shallow zone" হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে, যা স্বাভাবিক প্রবাহ ও অক্সিজেন চক্রকে ব্যাহত করছে।
গবেষণায় আরও জানা যায়, জমে থাকা পলিতে Zinc ও Magnesium সহ ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে, যা সরোবরের বাস্তুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই ধরণের ধাতব দূষণ জলজ প্রাণীর প্রজনন ও স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গবেষকরা “Eco-sensitive dredging” বা পরিবেশ-সচেতন ড্রেজিং পদ্ধতি গ্রহণের সুপারিশ করেছেন, যার মাধ্যমে পলি সরিয়ে ফের জলাশয়ের স্বাভাবিক গভীরতা ও প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ধাপে ধাপে এবং সীমিত এলাকার পলি সাফাই করাটাই হবে পরিবেশের জন্য নিরাপদ।
KMDA–এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই National Green Tribunal–এর নির্দেশ অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে পলি সরানো, জলের মান উন্নয়ন, এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। এছাড়া পনির অতিরিক্ত আগাছা রোধে ইতিমধ্যেই grass carp মাছ ছাড়া হয়েছে, যা প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করছে।
রবীন্দ্র সরোবর কেবলমাত্র একটি জলাশয় নয়; এটি কলকাতার ‘green lung’ হিসেবেও পরিচিত। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এখানে ভিড় জমায় অবকাশ যাপন ও প্রাতঃভ্রমণের জন্য। পরিবেশবিদদের মতে, এটি রক্ষায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে জলাধারটি তার স্বাভাবিক ভারসাম্য হারাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন