Top News

উড়ানের পরেই ভবনে ভেঙে পড়ল বিমান, মৃত্যু মিছিল পড়ুয়াদের, যেভাবে জুড়ে গেল আহমেদাবাদ-ঢাকা দুর্ঘটনা

 


১২ জুন, ২১ জুলাই। এক মাস পেরিয়ে কয়েকদিন। দুই দেশে দুই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। হাহাকার, মৃত্যু মিছিল। আশ্চর্যজনকভাবে দুই দুর্ঘটনা মিলে গেল এক জায়গায়। 

দুপুর ১টা ১৭ মিনিট নাগাদ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল।

১টা ৩৮ মিনিট নাগাদ বিমানটি স্থানীয় একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে ঢুকে যায়। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ছাত্রাবাসের একাংশ। চাপা পড়ে প্রাণ যায় বহু পড়ুয়া এবং সেখানে কর্মরত কয়েকজনের। প্রকাশ্যে আসা বেশকিছু ছবিতে দেখা গিয়েছিল, ছাত্রাবাসে পড়ুয়ারা তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তার মাঝেই মৃত্যু। উল্লেখ্য, আহমেদাবাদ এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনায় কেবল এক যাত্রী ছাড়া ওই বিমানে থাকা সকল যাত্রী, ক্রু-র মৃত্যু হয়। এআই ১৭১ ফ্লাইটে থাকা যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা-সহ মোট ২৭৪ জনের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়।


২১ জুলাই, ঢাকা বিমান দুর্ঘটনা। সোমবার ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বায়ুসেনার প্রশিক্ষণ বিমানটি একটি স্কুলের উপর ভেঙে পড়ে। সোমবার দুপুরে ১টা ৬ মিনিটে উড়ানের পরেই ঢাকার উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ক্যাম্পাসে বিমানটি ভেঙে পড়ে। সেই সময় স্কুলে ছিল পড়ুয়ারা। ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ১৯ জনের। একজন বিমান চালক, দু' জন শিক্ষক, ১৯ জন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে।


দুর্ঘটনার পর, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা বাংলাদেশে। মঙ্গলবার, বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। আহত ও নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

১২ জুনের দুর্ঘটনা আর ২১ জুলাইয়ের দুর্ঘটনা মিলে গিয়েছে এক জায়গায়। তা হল, উড়ানের পরের পরিস্থিতি। আহমেদাবাদের মতোই, উড়ানের কিছুক্ষণ পরে ঢাকার বিমানটিও একটি ভবনে ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম সময় টিভি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমানটি মাইলস্টোন কলেজের হায়দর আলী ভবনের প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে এবং ওই ভবনের নীচের তলার একদিকে ঢুকে আরেক দিকে বেরোয় বিমানটি।


ঘটনার পরের ছবিও এক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে খোঁজ, খোঁজ হাসপাতালের বাইরে। আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় যাত্রীদের দেহ এমনভাবে ঝলসে গিয়েছিল, তার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করায় হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ। ওই পরীক্ষার পরে দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। ঢাকাতেও মৃত্যু মিছিল। হাসপাতালের সামনে হাহাকার, অপেক্ষা। বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় মোট ১৬৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।


বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, বিমান দুর্ঘটনার পর আইএসপিআর বার্তায় জানিয়েছে, বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড়ানের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বিমানটি। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মহম্মদ তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।


বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। একটি বিবৃতিতে তিনি বলেন, "রাজধানীর দিয়াবাড়়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক‍্যাম্পাসে আজ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি।"

তিনি আরও বলেন, "এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। আমি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ প্রদান করছি। সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে।"

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন