বাংলার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মু, যেন ঐতিহাসিক মুহূর্তে সাক্ষী শহর। দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ফের একবার দেশের রাষ্ট্রপতির পা পড়ল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের পর, এই প্রথমবার ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মু দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে আগমন যেন এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সৃষ্টি করল।
এদিন সন্ধ্যে ছয়টায় মন্দির পরিদর্শনে আসেন তিনি। ছিলেন প্রায় ৩০ মিনিট।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রানী রাসমণি ছিলেন নারী সমাজের এক অগ্রদূত, যিনি সমাজ সংস্কার ও ধর্মীয় জাগরণের পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বর্তমান রাষ্ট্রপতিও একজন নারী, যিনি দেশের কল্যাণে ও সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রপতির এই সফর যেন অতীত ও বর্তমানকে এক সূত্রে বাঁধল।
রাষ্ট্রপতির আগাম আগমনের খবরে মন্দির চত্বর সাজিয়ে তোলা হয় বিশেষভাবে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মু মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং মা ভবতারিণীর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করেন। নিজ হাতে আরতিতেও অংশ নেন তিনি। সেই সময় ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা, আরতির শেষে হঠাৎই দেখা যায় মা ভবতারিণীর হাতে থাকা একটি পদ্ম ফুল খসে পড়ে। উপস্থিত পুরোহিত ও ভক্তদের মতে, একে "ঈশ্বরের আশীর্বাদ" হিসেবে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নিজে সেই পদ্মফুলটি সযত্নে আশীর্বাদ স্বরূপ সঙ্গে করে নিয়ে যান বলেই জানিয়েছেন মন্দির কমিটির ট্রাস্টি কুশল চৌধুরী। মাকে দর্শনের পাশাপাশি এদিন রাষ্ট্রপতি ঘুরে দেখেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ঘরটিও। মন্দির কমিটির তরফে রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ সম্মান জানানোর পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেওয়া হয় মানপত্র, রানী রাসমণির একটি বই এবং কালী মায়ের একটি ছবি।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস, ধর্মীয় প্রভাব এবং মা ভবতারিণীর সেবার কথা জেনে রাষ্ট্রপতিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বলেই জানা যায়। সফর শেষে তিনি জানান, এই পবিত্র স্থানে আসতে পেরে তিনি গর্বিত ও কৃতজ্ঞ। রাষ্ট্রপতির এই সফর ঘিরে দক্ষিণেশ্বর ও আশপাশের এলাকায় ছিল চূড়ান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাস্তার দু'ধারে উৎসাহী মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই বলেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া যেন তাদের জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন