Top News

দুর্গাপুজাতে অল্প দিনের জন্য ছুটি কাটানোর ঠিকানা, ঘুরে আসুন নবাবী শহর

 News Tap Bangla:আর  মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই আস্তে চলেছে বাংলার সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজা। পুজার মরশুমে অনেকের মধ্যে অন্য কথাও গিয়ে ছুটি কাটাতে ইচ্ছা করে। সেদিক থেকে ৩ থেকে ৪ দিন ছুটি কাটানোর মত জায়গা অনেক কম পাওয়া যায় । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এমন কয়েকটি জায়গা আছে যেখানে খুব অল্প দিনের মধ্যে ছুটি কাটিয়ে আনন্দ উপভগ করা যাবে। যার মধ্যে অন্যতম হল নবাবী জেলা মুর্শিদাবাদ। 

বাংলার নবাবি শহর মানেই মুর্শিদাবাদ। প্রথম দিকে বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার রাজধানী ছিল এই জায়গা। ঐতিহাসিকরা বলেন, নবাব মুরশিদকুলি খাঁর নাম অনুসারে এই রাজ্যের নামকরন হয়। আজ এই জায়গায় অনেক অজানা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। বাংলা তথা ভারতবর্ষের শাসকদের মধ্যেকার অনৈক্য আর ইংরেজ কুলের গোলা বারুদ, ছলনাময় আবহাওয়া। একের পর এক নির্বাক স্মৃতিসৌধ। তাই বাংলার ইতিহাসের আসল ছোঁয়া পেতে মুর্শিদাবাদের জুড়ি নেই। 

মুর্শিদাবাদ ঘুরতে গেলে বেশ কিছু জায়গা না ঘুরলেই হয় না। সে জায়গা গুলো হল-

হাজারদুয়ারি প্রাসাদ

হাজারদুয়ারি প্রাসাদ হল মুর্শিদাবাদ জেলার সেরা দর্শনীয় স্থান। ৪১ একর জায়গা নিয়ে তৈরি এই বিশাল স্থাপত্যটি মীর জাফরের বংশধর নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহ তৈরি করান। প্রাসাদটিতে এক হাজারটি দরজা রয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট থেকেই এটির নাম ‘হাজারদুয়ারি’। যদিও এর মধ্যে ৯০০ টি আসল দরজা আর বাকিগুলি বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য মিথ্যা দরজা হিসাবে তৈরি হয়েছিল। হাজারদুয়ারির স্থাপত্যে গ্রিক ও ইতালীয় স্থাপত্যরীতির প্রভাব লক্ষ করা যায়। প্রাসাদটিতে ১১৪টি ঘর এবং ৮টি গ্যালারি রয়েছে।
বর্তমানে এই প্রাসাদটি একটি মিউজিয়াম এবং সরকারি রক্ষণাবেক্ষণে আছে। আপনারা এখানে সিরাজ উদ-দৌলার তরবারি এবং তাঁর ব্যবহৃত অন্যান্য সামগ্রিও চাক্ষুস করতে পারবেন।

নিজামত ইমাম্বাড়া


হাজারদুয়ারী প্যালেসের ঠিক বিপরীত দিকে ভাগীরথি নদীর তীরে আবস্থিত নিজামত ইমামবাড়া। সিরাজদৌলা নির্মিত কাঠের ইমামবাড়া আগুনে পুড়ে যাবার পর, বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব নাজিম মনসুর আলী খাঁ ফেরাদুন জা ১৮৪৭ খ্রীস্টাব্দের প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই বিশাল নিজামত ইমামবাড়া নির্মান করেন। ইমামবাড়াটি লম্বায় ৬৮০ ফুট এবং সেন্ট্রাল ব্লকটি প্রায় ৩০০ ফুট লম্বা এবং অত্যন্ত্য সুন্দর এই স্থাপত্যটি। এই নিজামত ইমামবাড়া বাংলা তথা ভারতে সবচেয়ে বড় ইমামবাড়া। প্রতি বৎসর মহরম উপলক্ষে মহরম মাসের প্রথম দশদিন ইমামবাড়ার সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে একটি মেলা বসে। এটি মুর্শিদাবাদ জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহের অন্যতম।

নশীপুর রাজবাড়ী


নশীপুর রাজবাড়ী জগৎ শেঠের বাড়ির কাছেই অবস্থিত এবং মুর্শিদাবাদের বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটক গন্তব্য। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে এটি তৈরি করেছিলেন রাজা কীর্তিচাঁদ বাহাদুর। তবে এই প্রাসাদটি দেবী সিংহের বাড়ি নামেই খ্যাত। এই দেবী সিং ৭৬-এর মন্বন্তরের পরে রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি প্রজাদের উপর ভীষণ অত্যাচার উৎপীড়ন করতেন। তিনি বিভিন্ন উপায়ে প্রচুর ধনসম্পত্তির অধিকারী হন এবং বসতবাড়ীর জন্য “হাজারদুয়ারীর” অনূরূপ প্রাসাদ তৈরী করেন। আজ নশীপুর রাজবাড়ী জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে ও নশিপুর রাজপরিবারের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, ফরমান, তৎকালীন কর আদায়ের বৈধ কাগজপত্র এবং অন্যান্য ধনসম্পদ রক্ষিত আছে।

কাঠগোলা বাগান


হাজারদুয়ারি থেকে ৪ কিমি গেলেই পাওয়া যাবে বাগান ঘেরা সুবিশাল কাঠগোলা প্রাসাদ। জায়গাটার নাম কাঠগোলা কিভাবে হল তা নিয়ে অনেকে বলেন যে এই বাড়ী চারিদিকে বাগান ঘিরে প্রচুর ফুলের চাষ হত আর তার মধ্যে গোলাপের নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে, আর এই কাঠগোলাপ থেকেই এই জায়গাটির নাম কাঠগোলা হয়। ১৯৩৩ সাল নাগাদ লক্ষ্মীপৎ সিং দুগড় নবাবের থেকে বারো শ টাকায় এই অঞ্চলটি কিনে নেন। উদ্দেশ্য ছিল বিশাল মাপের জৈন মন্দিরের নির্মান। কাঠগোলা বাগানবাড়ি, প্রায়শই পরেশ নাথ মন্দির বা কাঠগোলা মন্দির নামে পরিচিত একটি মন্দির যার প্রধান দেবতা ভগবান আদিনাথ

পরবর্তি কালে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হন লক্ষ্মীপৎ ভাইয়েরা। মন্দিরের সাথে তাই সুসজ্জিত এক প্রাসাদ, চিড়িয়াখানা, সুড়ঙ্গপথ, শৌখিন ভাস্কর্য ইত্যাদি দ্বারা সাজান এই প্রাসাদটিকে। সেখানে পাটনা, লক্ষ্ণৌ থেকে পটিয়সী নর্তকীরা আসতেন নৃত্য প্রদর্শন করতে। শোনা যায় মীরজাফর এখানেই মুন্নি বাঈয়ের রূপে ও‌ নৃত্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিয়ে করেন। এই বাগানবাড়িতেই চলত ব্রিটিশদের সাথে নবাবী আমল ধ্বংসের নানা ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা।

কাটরা মসজিদ



কাটরা মসজিদ মুর্শিদাবাদ রেল ষ্টেশন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অত্যন্ত প্রাচীন এবং জনপ্রিয় মসজিদ। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে এই কাটরা মসজিদ নির্মান করেন। বলা হয় মসজিদটি নাকি ১ বছরের মধ্যে মুরাদ ফরাশ নামে একজন স্থপতি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মসজিদের সিঁড়ির নিচে ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে মুর্শিদকুলি খাঁয়ের মৃতদেহ শায়িত রয়েছে। কাটরা মসজিদের নির্মান শৈলীর কিছু লক্ষণীয় বিষয় হল ইট নির্মিত হওয়া সত্বেও মসজিদের দ্বিতল গম্বুজ ঘর এবং মিনার, কুরআনের শিলালিপি ইত্যাদি। কাটরা মসজিদের চত্বরে একসাথে দুহাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।

জাফরগঞ্জ প্রাসাদ



ভাগীরথীর পূর্বদিকে এবং রাস্তার ধারেই মীরজাফরের প্রাসাদ অবস্থিত। নবাব আলীবর্দী খাঁ তাঁর ভগ্নী শাহখানমের জন্য প্রাসাদটি তৈরী করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হীরাঝিল প্রাসাদে চলে যান। হাজার দুয়ারির বাইরে একেবারে অপরিচিত একটা জায়গা জাফরগঞ্জ। সেখানে লুকিয়ে রয়েছে মীরজাফরের ইতিহাস। ভগ্নদশায় অবহেলায় আজও পড়ে আছে এই মীরজাফরের প্রাসাদ, যাকে এখানে নিমকহারামের দেউড়ী বলা হয়। ইতিহাসের পাতায় তাঁকে সকলে বিশ্বাসঘাতক বলেই জানে। মুর্শিদাবাদের অফবিট পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম এই জাফরগঞ্জ। এখানে রয়েছে মীরজাফরের পরিবারের সমাধি। 

যাওয়ার পদ্ধতি-

মুর্শিদাবাদ এবং তার পার্শ্ববর্তী রেল রেলস্টেশন বহরমপুর কোর্ট থেকে সরাসরি শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেন এবং কিছু এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে যেমন- হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস, ধনধান্যে এক্সপ্রেস এবং ভাগীরথি এক্সপ্রেস।  এছারাও সরক পথে যাওয়ারও সুযোগ আছে। কিন্তু কেউ বিমানে আস্তে চাইলে তাকে প্রথমে নিকটবর্তী কোন বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে গাড়ী বা ট্রেনে আসতে পারে। 

মুর্শিদাবাদ এলাকাতে থাকার জন্য বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ দুই জায়গাতেই থাকতে পারেন। বহরমপুর কোর্ট স্টেশন থেকে মুর্শিদাবাদ মাত্র ১০ কিমি। এখানে অল্প খরচে ভালো থাকার  বন্দবস্তও আছে। 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন