গতকাল এক ঐতিহাসিক সন্ধের সাক্ষী থাকলো কোলকাতা। বহু বছর পর একই মঞ্চে, একই অনুষ্ঠানে গান গাইলেন দুই প্রবীণ প্রেমিক।
বাইরে বৃষ্টি। সদ্য ছুটি হয়েছে স্কুল, কলেজ, অফিস। ট্র্যাফিক জ্যাম বাড়ছে। এরই মধ্যে জ্বলে উঠলো কলামন্দিরের আলো। বাইরের লাইন উপেক্ষা করে, শ্রোতারা নিজেদের আসনে বসে অধীর আগ্রহে। সারা অডিটোরিয়ামে মৃদু গুঞ্জন। ৫:৫৫। মঞ্চে এগিয়ে এলেন 'চন্দ্রবিন্দু'র অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ঘোষণা করলেন বৃহৎ বন্ধুতানুষ্ঠানের। ঠিক ৬টা। পর্দা সরে গেলো। মঞ্চে কবীর সুমন। আলোর কারিকুরিতে যেন বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁর অভিজ্ঞ প্রবীণত্ব। কিন্তু হাসিতে ঝলমল করছে তারুণ্য! নমস্কার করে গোড়ায় কিঞ্চিত বক্তব্য রাখলেন সুমন। আনলেন "বাঙালিদের" ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গ। বলতেই বলতেই চলে গেলেন গানে। আশ্রয় নিলেন আপামর বাঙালির দুর্বলতা 'রবীন্দ্রনাথ'-এ। গেয়ে উঠলেন "আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে"! তারপর তাঁর নিজের রচনায়। নয়ের দশকে যে সব গান বিপুল সাড়া ফেলেছিলো, সেই গানই শোনা গেলো তাঁর কন্ঠে। একে একে সুমন গাইলেন, "খাতা দেখে গান গেওনা", "গানওলা", "পাগল", "কতোটা পথ পেরোলে", "হাল ছেড়ো না বন্ধু", "পেটকাটি চাঁদিয়াল" সহ তাঁর হিটস্! ভীষণ প্রাণবন্ত ছিলেন তিনি ঐদিন। প্রশংসা করতেই হয় তাঁর সহশিল্পীদের। জনপ্রিয় কিবোর্ড বাদক শিবব্রত অত্যন্ত ভালো বাজিয়েছেন,যদিও অনেক জায়গাতেই গানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছিলো না তার বাজনা। প্রশংসনীয় গিটারে বিভুব্রতর সঙ্গত।
![]() |
দুটো বন্ধু |
শেষকালে সুমন মঞ্চে আহবান করলেন অঞ্জন দত্তকে। প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়ছিলো হাততালিতে। বহুবছর পর একসঙ্গে দুই আইকন। অনুরোধের বেড়াজাল ভেদ করে দুই সুহৃদের কন্ঠ শোনা গেলো "অনেকদিন পর আবার চেনা মুখ।" গিটার বাজালেন অঞ্জন-পুত্র নীল দত্ত। আবেগাপ্লুত দুই সঙ্গীতকারের মিলন ঘটিয়ে শেষ হলো অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধ।
বিরতির পর অঞ্জন। সাহেবি রাংতায় মোড়া শেষার্ধ। প্রথম গান "খাদের ধারে অবেলায়।" গানটি ওঁর বহুল জনপ্রিয় "দার্জিলিং"এর নব্য সংস্করণ বলা যেতে পারে। দুটি গান পর, অঞ্জন তাঁর বেটন তুলে দিলেন পুত্র নীলের হাতে। শান্ত স্বভাবে গিটার বাজিয়ে গেয়ে চললেন নীল। অঞ্জন ফিরে আসতেই মুড়ি-মুড়কির মতো অনুরোধ-বাণ ধেয়ে আসতে লাগলো চারদিক থেকে। অঞ্জন ধরলেন "জেরেমির বেহালা"। গাইলেন নতুন একটি চমৎকার রচনাও। চিরাচরিত হিটগানের সম্ভারে ছিলো, "রঞ্জনা", "মেরি অ্যান", "টিভি দেখো না"। অনুরোধের তোড়ে খানিক বিব্রতও হন শিল্পী। সামান্য অনুরোধে আমল দিয়ে গাইলেন "তানিয়া", "বৃষ্টি দেখেছি", "মালা"।অজস্র গানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় এই মহোৎসব। স্বভাবতই স্বল্পভাষী অঞ্জন কথা কম বলে এক নাগাড়ে এইদিন গেয়ে গিয়েছিলেন গান। তবে "বেলা বোস" এর অনুরোধ অতি সাবধানেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। চমৎকার লেগেছিলো নীল দত্তর গিটার।
উদ্যোক্তা 'ব্র্যাউন ক্রো'কে অজস্র ধন্যবাদ এইরকম অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য। শ্রোতারা এই অত্যাশ্চর্য যুগলবন্দির সাক্ষী থাকতে পেরে বড়োই তৃপ্ত। এমনকি এর রেশ যে বেশ কিছুদিন মননে চিন্তনে থেকে যাবে, সেই কথাও অনস্বীকার্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন