Top News

পুজোর সময় ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা পাহাড়, ঘুরে আসতে পারেন পাহারের রানী দার্জিলিং থেকে, জানুন বিস্তারিত

News Tap Bangla: পুজো আসতে আর এক মাসও নেই। এখন থেকেই অনেকের মনে শুরু হয়ে গিয়েছে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান। কেউ কেউ যাচ্ছে বহুদূরে আবার কেউ কেউ অল্প টাকাই যাচ্ছে কাছাকাছি। তবে পুজোর সময় পাহাড় দেখার অন্যরকম শান্তি লক্ষ্য করা যায়। পাহাড় ঘোরার সবথেকে ভালো সময়ই হছে অক্টোবর এবং নভেম্বর। আর এই পাহাড় নাম শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে দার্জিলিং। 

দার্জিলিং জেলার দর্শনীয় স্থান বলতে গেলে সমগ্র জেলাকেই বলতে হয়। দার্জিলিং শহরকে সারা দেশই “পাহাড়ের রানি” বলেই জানি। তবে দার্জিলিং শহর ছাড়াও এই ছোট্ট জেলার মধ্যে অসংখ্য সুন্দর ভ্রমন গন্তব্য রয়েছে যেমন, কার্শিয়ং, মিরিক, লেপচাজগত, তিঞ্চুলে, সুখিয়াপোখরি, লামাহাট্টা, মানেভঞ্জন, সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি স্থানগুলি পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমন মানচিত্রে একেবারে উপরের দিকে স্থান পায়। দার্জিলিং জেলার ভ্রমন সংক্রান্ত কাঠামো গড়া শুরু হয় ব্রিটিশ রাজত্বের প্রথম দিক থেকেই।

দার্জিলিঙের বেশ কয়েকটি জায়গা অন্যতম, সেগুলি হল-

১। দার্জিলিং শহর 



দার্জিলিং নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যে ছবিটা আমাদের মনে প্রকট হয় তা হল মেঘের কোলে ভেসে বেড়ান একটা ছোট্ট বসতি। আসলে এটাই “পাহাড়ের রানী” দার্জিলিং শহর, দার্জিলিং জেলার প্রানকেন্দ্র। বাঙালি মাত্রেই তাদের ভ্রমণের তালিকা শুরু হয় দার্জিলিং দিয়েই। দার্জিলিং তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা বাগান, হিমালয়ান রেলের জন্য সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। বর্তমানে শুধু বাঙালিই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা সারা বছর থাকে এই শৈল শহরটিতে। কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য বা টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় এক  নৈসর্গিক সৌন্দর্য। 
দার্জিলিং শহরের প্রাণকেন্দ্র হল এর চৌরাস্তা মল। চৌরাস্তা মল থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে টয় ট্রেনের জন্য ১৯১৯ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি আঁকাবাঁকা রেলপথ, বাতাসিয়া লুপ এবং আর একটু এগিয়ে ঘুম ষ্টেশন যা কিনা ভারতের সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন।
 
দার্জিলিঙের মধ্যে আরও কিছু জায়গা আছে যেমন

  • অবজারভেটরি হিল
  • মহাকাল মন্দির
  • পিস প্যাগোডা
  • ঘুম ষ্টেশন
  • টাইগার হিল
  • দার্জিলিং টয় ট্রেন
  • সিঞ্চল লেক ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

2। মিরিক



দার্জিলিঙের মিরিক একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। খাড়াও রাস্তা, এইদিকে চা বাগান ও লম্বা সেগুন গাছ আর প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ মিরিক পর্বতপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। শহরের দূষণযুক্ত পরিবেশ থেকে বের হয়ে চলে আসুন পাহাড়ের বুকে।

মিরিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। এখানকার জলবায়ু সারাবছরই মনোরম থাকে তবে গ্রীষ্ম কলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াস এবং শীতে সর্বোনিম্ন ১° সেলসিয়াস।

এছাড়াও মিরিকে কমলালেবু বাগান ও চা বাগান দেখতে পাওয়া যায়। শুধু পরিবেশের সঙ্গেই নয় আপনি এখানকার জনসাধারণের মধ্যেও খুব ভালোভাবে মিশে যেতে পারবেন। প্রকৃতির মাঝে কিছুদিন নিঃশ্বাস নিয়ে আবার নতুনভাবে নিজের পুরনো জীবনে ফিরে যাওয়ার উদ্যম পাবেন।

মিরিকে এসবের পাশাপাশি আর কিছু জায়গা আছে যেমন সুমেন্দু হ্রদ,বোকার মঠ, রামিতে দারা ভিউ পয়েন্ট,ডন বসকো চার্চ। 

৩। লেপচাজগৎ



লেপচাজগৎ দার্জিলিং শহর এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার মধ্যবর্তি অঞ্চলে একটি শান্ত ছবির মত গ্রাম। একসময় এটি স্থানীয় লেপচাদের গ্রাম ছিল মাত্র। জায়গাটি পাইন, স্প্রুস ইত্যাদি লম্বা খাড়াই গাছে ঘেরা কুয়াশাচ্ছন্ন একটি অঞ্চল। আর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যই এই গ্রামটিকে একটা স্বপ্নের গন্তব্য করেছে। একেবারে ভোরের আকাশে যখন লাল-হলুদ রঙ ধরে সেখানথেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য আপনাকে বাকরুদ্ধ করবেই।

আবার পাহাড়ের এ দিকে দাওয়াইপানি আর উল্টো দিকের পাহাড়ে দার্জিলিং শহর। রাত হতেই আলোর মালায় রোজ সেজে উঠে দার্জিলিং শহরটা। মনে হবে যেন অসংখ্য জোনাকি ধিকিধিকি করে জ্বলছে। সে এক অবাক হওয়া যা ভাষায় প্রকাশ করা দুরহ। লেপচাজগৎ এ আপনি হিমালয়ান সালাম্যান্ডার বা ওয়ারব্লার, মিনলা, সিবিয়ার মতো পাখি দেখতে পাবেন।

লেপজগতে দেখার মত বেশ কিছু জায়গা আছে যা কুয়াশায় ঢাকা জঙ্গল, সূর্যোদয় পয়েন্ট, রাতের দার্জিলিং শহর

৪। সেবক



সেবক দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির কাছে একটি ছোটো শহর। এটি সিকিম রাজ্যের সীমান্তের কাছেকাছি অবস্থিত। ডুয়ার্সে তিস্তা নদীর তীরে এই শহরটি অবস্থিত এবং এর উপরে দুটি সেতু রয়েছে – যথা করোনেশন ব্রিজ এবং সেবক রেলওয়ে সেতু। ওই এলাকায় ভারতীয় সেনা ও বিএসএফ ক্যাম্প রয়েছে। মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এখানেই রয়েছে। এই অভয়ারন্যে বানর, হাতি, চিতাবাঘ এবং দাগযুক্ত হরিণের মতো অনেক বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এই মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে।

সেবক স্থানীয় লোকজনের কাছে সবচেয়ে পছন্দের পিকনিক স্পট। সেবকেশ্বরী কালী মন্দির এখানকার সবচেয়ে শ্রদ্ধার মন্দির। সেবক ঘোরার সবচেয়ে ভাল সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী বলাযায়। তবে দুর্গাপূজা এবং কালী পূজার সময় যখন বড় অনুষ্ঠান হয় এখানকার মন্দিরগুলোয়।

সেবকে ঘোরার মত জায়গা হলয় সেবকেশ্বরী কালী মন্দির, করোনেশন ব্রিজ, সবুজ বনভূমি

৫। তিঞ্চুলে



তিনচুলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয় হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রাম রয়েছে কালিম্পংয়ের দিকে চেয়ে। আর কাঞ্চনজঙ্ঘা তো দাঁড়িয়েই রয়েছে এই গ্রামগুলিকে দেখাশোনার জন্য। এই গ্রামে যদি আপনি একবার গিয়ে পৌঁছান, তাহলে আপনার চোখে শুধু ধরা দেবে সবুজ প্রান্তর। কারণ ছোট ছোট তিনটি পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রাম। আর তিনটি পাহাড় নাকি দেখতে অনেকটা চুল্লির মত, আর সেই কারণেই এই গ্রামের নাম তিনচুলে। এই গ্রামের মূল আকর্ষণ হল অর্কিডের বাগান। তাছাড়াও রয়েছে একটি প্রাচীন মনেস্ট্রি আর ছয়টি চা বাগান।

এই গ্রামে আপনার ঘুম ভাঙতে পারে পাখির কলরবে। আর সারাদিন এখানে আনাগোনা রয়েছে মেঘেদের। মেঘ, পাহাড়, বন আর নদী এই চারটের মিলিত শব্দ সারাদিনই আপনার কানকে ব্যস্ত করে রাখতে পারে। দার্জিলিং, শিলিগুড়ি কিংবা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি করে সোজা চলে যেতেন পারেন এই অফবিটে।

 ৬। কার্শিয়াং



কার্শিয়াং একটি সুন্দর ছোট্ট শহর যেটি দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। কার্শিয়াং সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৪৯০০ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটি লেপচা শব্দ “খারসাং” থেকে এই এলাকার এমন নামের উৎপত্তি। সেই খারসাং শব্দের অর্থ ‘সাদা অর্কিডের ভূমি’। ১৮৩৫ সালে সিকিমের চোগিয়াল রাজবংশের হাত থেকে কার্শিয়াং নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল ইংরেজ। ১৮৮০ সাল থেকে এই স্থান পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তারপর থেকে বিশেষ করে বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় এই পার্বত্য শহরের নাম।
এখানে আর বেশ কয়েকটি জায়গা হল সালামান্দার লেক , ডাউ হিল , কার্শিয়াংয়ের অদূরে অবস্থিত একটি ভিউ পয়েন্ট মংপুতে পাহাড়ের এক কোণায় এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলো আজও পর্যটকদের টানে। যদিও ওই প্রাচীন স্থানটির অবস্থিতি কালিম্পিংয়ে। মংপু বাঙালি পর্যটকদের।

৭। লামাহাট্টা



লামাহাট্টা বা স্থানীয় উচ্চারণ-এ “লামাট্টা” দার্জিলিং এর চাকচিক্য থেকে অনেক দূরে শেরপাদের একটি গ্রাম। এন.জে.পি থেকে গাড়িতে তিন থেকে চার ঘন্টার রাস্তা হলেও এখানে পৌঁছানোর পর সকল ক্লান্তি একনিমেষে উধাও হয়ে যাবে এখানকার সৌন্দর্যে আর সরল গ্রামবাসীর আপ্যায়নে। গ্রামের প্রথমেই চোখে পরবে এক অনুপম ইকোপার্ক।

ইকো পার্কের ভিতরে নানান গাছগাছালি ও অসংখ্য ফুলের সমারোহে পরিপুর্ন । বিশাল উঁচু পাইন গাছগুলি দম্ভেরসাথে আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের সাথেই পাল্লাদিয়ে পতপত্ করে দলছে নানা রঙের কাপড়ের পতাকা, স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, এই পতাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বাতাসে চারপাশের পরিবেশ ও মানুষের মন পবিত্র হয়। বাগানের একবারে উপরে যাওয়ার জন্য জঙ্গল কেটে আঁকাবাঁকা রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকের অ্যাডভেঞ্চারের লোভ সামলানো দায়। চূড়ায় পৌঁছে দেখতে পাবেন সুন্দর একটি লেক যেটা গ্রামবাসিদের কাছে খুব পবিত্র।

এর কাছাকাছি আর কিছু জায়গা আছে যা ডানডা ,পেশক ভিউ পয়েন্্‌ ডেন্স ধুপি প্ল্যানটেশনতাকদা ।

দার্জিলিং যাওয়ার উপায় এবং খরচ

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে যাতায়াত সহ ৫ দিনের ভ্রমণে ২ জনের খরচ ৩০,০০০/- টাকা পড়ে। এখানে যাতায়াতের জন্য ট্রেন, বা্‌স,  প্লেন সব রকম সুযোগসুবিধা আছে।  প্লেনে গেলে বাগডগ্রা এয়ারপোর্ট এ নেমে সেখান থেকে গাড়িতে যেতে হবে। আবার বাস বা ট্রেন আ গেলে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি তে নেমে সেখান থেকে গাড়িতে দার্জিলিং যেতে হবে। গাড়ি ভারা মোটামুটি ৩০০০ থেকে শুরু হয়ে থাকে। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন