মধ্য এশিয়ার
ফুটবলের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় লিখল ভারত। তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত
সিএএফএ নেশনস কাপ ২০২৫-এ ভারত প্রথমবারের মতো ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছে। উজবেকিস্তান
গোল্ড এবং ইরান সিলভার পদক অর্জন করলেও, ভারতীয় দল তাদের আগ্রাসী এবং সংগঠিত খেলার
মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জয় করেছে। এটি শুধু একটি পদক নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য
এক আত্মবিশ্বাসী সূচনা।
টুর্নামেন্টের পটভূমি
২৯ আগস্ট থেকে
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল আটটি দেশ: উজবেকিস্তান,
ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, আফগানিস্তান, ওমান এবং ভারত। মালেশিয়া
শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ায় ভারতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)
টুর্নামেন্টের আগে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দল ঘোষণা করে। এটি ছিল সিএএফএ-র ১০ বছরের পূর্তি
উপলক্ষে আয়োজন, যেখানে নবীন দলগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ
তৈরি হয়।
গ্রুপ পর্বে
ভারতের লড়াই
ভারত গ্রুপ
বি-তে পড়ে ইরান, তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে। ফিফা র্যাংকিংয়ে ভারতের অবস্থান
ছিল ১২৭তম, গ্রুপের সবচেয়ে নিচে। তবুও পুরো দল দারুণ লড়াই দেখায়।
- আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১-০ জয়
দিয়ে অভিযান শুরু।
- ইরানের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে ০-৩
হারে শিক্ষা গ্রহণ।
- তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে ২-১ জয়
এনে শেষ আটে পৌঁছানো।
প্রধান কোচ
খালিদ জামিলের নেতৃত্বে দল পজিশনভিত্তিক খেলা, দ্রুত পাস এবং রক্ষণ সংগঠনের ওপর গুরুত্ব
দেয়।
নকআউট পর্বে
উত্তরণ
সেমিফাইনালে
ইরানের কাছে ১-৪ হারের পর ভারত তৃতীয় স্থানের ম্যাচে ওমানের বিরুদ্ধে নাটকীয় পেনাল্টি
শুটআউটে ৩-২ জয় পায়। গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু শেষ পেনাল্টি বাঁচিয়ে
ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দেন। এটি ভারতীয় ফুটবলের জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত।
গোলদাতা ও পুরস্কার
উজবেকিস্তানের
ইগর সেরগেভ সর্বোচ্চ ৩ গোল করেন। তাঁর দলের সতীর্থ খোজিয়াকবার আলিজোনভ
ফাইনালের ম্যাচজয়ী গোল দিয়ে সেরা খেলোয়াড় হন। ভারতের জন্য উদান্ত সিং এবং
মুহম্মদ উভাইস দারুণ পারফর্ম করেন। উভাইসকে ‘সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়’
হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ইরানের পয়াম নিয়াজমান্দ সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার
পান। তাজিকিস্তান ফেয়ার প্লে পুরস্কার অর্জন করে।
পরিসংখ্যান
- মোট গোল: ৩৬
- মোট ম্যাচ: ১৪
- প্রতি ম্যাচে গড় গোল: ২.৫৭
- সবচেয়ে বেশি ক্লিন শীট: উজবেকিস্তান
- সবচেয়ে বেশি ফাউল: আফগানিস্তান
- পেনাল্টি শুটআউট: ১ (ভারত বনাম ওমান)
ভারতের ভবিষ্যৎ: এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭
এই ব্রোঞ্জ
জয় ভারতের জন্য অনুপ্রেরণা। সামনে রয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাইপর্ব।
আগামী ম্যাচসমূহ:
- ৯ অক্টোবর ২০২৫: ভারত বনাম সিঙ্গাপুর
- ১৪ অক্টোবর ২০২৫: সিঙ্গাপুর বনাম
ভারত
- ১৮ নভেম্বর ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম
ভারত
- ৩১ মার্চ ২০২৬: ভারত বনাম হংকং
খালিদ জামিলের
কৌশল, তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ এবং সংগঠিত রক্ষণ ভারতের প্রস্তুতির ভিত্তি। দীর্ঘ পাস,
সেট পিস এবং পাল্টা আক্রমণ ভবিষ্যৎ লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবে ফিটনেস, দলগত সমন্বয়
এবং গোল করার দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
ঐতিহাসিক ব্রোঞ্জ জয়: খালিদ জামিলের নেতৃত্বে
ভারতের সাফল্য
সিএএফএ নেশনস কাপ ২০২৫ ভারতের ফুটবলে নতুন দিশা দেখিয়েছে। ব্রোঞ্জ জয় শুধু একটি ট্রফি নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, কৌশলগত দক্ষতা এবং ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। তরুণরা নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছে এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা সহায়তা করছেন। সামনে চ্যালেঞ্জ থাকলেও এই পদক ভারতের ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন