পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে চিকিৎসা শিক্ষার্থীর ওপর নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনায় ক্রমে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। দ্বিতীয় বর্ষের এক এমবিবিএস ছাত্রীকে একদল দুষ্কৃতী গভীর রাতে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে অপহরণ করে নির্জন জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থল দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলাকা।
নির্যাতিতার সহপাঠী এক যুবকও সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্তরা তাঁকেও মারধর করে ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। সেই যুবকের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের সংখ্যা চার থেকে পাঁচ জনের মধ্যে হতে পারে। এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।ভয়াবহ ঘটনার পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তরুণীকে দুর্গাপুরের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তিনি চরম আঘাতগ্রস্ত। ইতিমধ্যেই তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ, মেয়ে এখন হাঁটতে পারছেন না, বিছানাতেই শুয়ে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, “আমার মেয়ের নিরাপত্তা এখন পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চিত নয়। আমরা ওড়িশার বাসিন্দা, তাই মেয়েকে নিজের রাজ্যে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চাই।” তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়েকে নিরাপদে ওড়িশায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দোষীদের কোনওভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মেয়েদেরও রাতের বেলায় বাইরে না বেরনো উচিত। কলেজগুলিকেও নজরদারি বাড়াতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, মুখ্যমন্ত্রী আসলে মেয়েদের দায়ী করে বক্তব্য রেখেছেন, যা ‘ভিকটিম ব্লেমিং’-এরই সামিল। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এখন ধর্ষকদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যের চিকিৎসক মহলও ক্ষোভে ফুঁসছে। একাধিক মেডিক্যাল সংগঠন অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অপরাধের নেপথ্যে থাকা অন্যান্যদের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। কলেজের প্রশাসন জানিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্যাতিতার বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলেও, তাঁর ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়।
দুর্গাপুরের এই ঘটনা সমাজের নানা স্তরে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। রাজ্যের মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দোষীদের কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তবে তাঁর মন্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা রাজনৈতিক মহলে আরও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এখন নজর রাজ্য পুলিশের তদন্তের অগ্রগতির দিকেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন