ব্রেস্ট মিল্কে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি দেখা গেছে। বিহারের ছয়টি জেলায় মায়েদের দুধে এই বিষাক্ত উপাদান মিশে গেছে। নতুন গবেষণা এই খবর নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
এখন একটা ভয়াবহ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা গোটা দেশের স্বাস্থ্যজ্ঞদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। বিহারের ছয়টা জেলার মাতৃদুগ্ধে বিষাক্ত ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে। এটা কল্পনা করাও কঠিন। মাতৃদুগ্ধ তো নবজাতকের জন্য অমৃতের মতো। প্রকৃতির সবচেয়ে ভালো উপহার বলে সবাই মনে করে। কিন্তু এখানে মারাত্মক দূষণের চিহ্ন মিলেছে। ভোজপুর, সমস্তিপুর, বেগুসরাই, খাগড়িয়া, কাটিহার এবং নালন্দা জেলাগুলোতে এই সমস্যা। এই ছয় জেলার চল্লিশ জন মায়ের নমুনা পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। তাদের পাওয়া তথ্য সত্যিই শিউরে উঠার মতো।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত চলা এই গবেষণা বহু প্রতিষ্ঠানের। এতে দেখা গেছে সব নমুনাতেই ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি। এটা U238 হিসেবে পরিচিত। মাত্রা ছিল শূন্য থেকে পাঁচ পয়সন্ধি পঁচিশ মাইক্রোগ্রাম প্রতি লিটার। সবচেয়ে ভয়ের কথা হলো মাতৃদুগ্ধে ইউরেনিয়ামের গ্রহণযোগ্য সীমা এখনও আন্তর্জাতিকভাবে ঠিক হয়নি। তবে কাটিহার জেলায় সবচেয়ে বেশি একক মাত্রা পাওয়া গেছে। গড় দূষণের দিক থেকে খাগড়িয়া সবার আগে। এই ফলাফল থেকে বোঝা যায় প্রায় সত্তর শতাংশ নবজাতক এমন ইউরেনিয়ামের সংস্পর্শে এসেছে। এটা অ-ক্যান্সারজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পাটনার মহাবীর ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এবং দিল্লির এআইআইএমএস-এর গবেষকরা একসাথে এই কাজ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে গভীর চিন্তা প্রকাশ করেছেন। ইউরেনিয়ামের উৎস এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিহারে ভূগর্ভস্থ জলের উপর বেশি নির্ভরতা আছে। অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্য বের হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। এসব কারণে রাজ্যের জল এবং খাদ্যশৃঙ্খল আর্সেনিক, সীসা এবং পারদের মতো ভারী ধাতুতে বিষাক্ত হয়েছে। এখন মাতৃদুগ্ধেও ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে। এটা দেখায় দূষণ সবচেয়ে দুর্বল শিকারের কাছে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ শিশুদের কাছে। শিশুরা দ্রুত এই বিষ শোষণ করে। তাদের বিকশিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কিডনির ক্ষতি হতে পারে। স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়। বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে বাধা পড়ে। ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
এই উদ্বেগের মধ্যেও বিজ্ঞানীরা একটা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই স্তন্যপান বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ মাতৃদুগ্ধের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টির উপকার এখনও অপরিহার্য। এই ফলাফল জনস্বাস্থ্যে জরুরি পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অবিলম্বে পানীয় জলের গুণমান কঠোরভাবে পরীক্ষা করতে হবে। বায়োমনিটরিং শুরু করতে হবে। দূষণের উৎস খুঁজে বের করে তা বন্ধ করার জন্য কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এই শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের অস্তিত্ব এখন অদৃশ্য বিষের মুখে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন