দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসি-র ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বহাল থাকলেও, প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত নির্দেশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বহাল রাখার রায় দিয়েছে। একক বেঞ্চের 'জিরো টলারেন্স' নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে, ডিভিশন বেঞ্চ মূলত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তির ভিত্তিতে এই রায় প্রদান করেছে।
ডিভিশন বেঞ্চ তাদের নির্দেশনামায় যে কারণগুলির ওপর জোর দিয়ে একক বেঞ্চের নির্দেশ বাতিল করেছে, তা হলো: ডিভিশন বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে, এই ৩২ হাজার শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তাঁদের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। অনেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে একমাত্র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, ৩২ হাজার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনো অভিযোগ বা অপরাধের প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়মের জন্য এত বছর ধরে চাকরি করা শিক্ষকদের চাকরি কেড়ে নেওয়া 'অন্যায় ও অনৈতিক' হবে বলে ডিভিশন বেঞ্চ মনে করে। পর্যবেক্ষণে জানান, আর্থিক লেনদেন বা ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ আদালতের সামনে পেশ করা হয়নি। শুধুমাত্র সন্দেহের নিরিখে এত সংখ্যক প্রার্থীর চাকরি খারিজ করা হয়নি।
একক বেঞ্চ যখন চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল, তখন অনেকের প্রশিক্ষণ ছিল না। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ বর্তমানে উল্লেখ করেছে, এই ৩২ হাজার শিক্ষক এখন সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁরা D.El.Ed ও NIOS প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। একক বেঞ্চ মূলত অ্যাপটিটিউড টেস্ট না নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে—এই অভিযোগেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, অ্যাপটিটিউড টেস্ট যে হয়নি, তার সপক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ আদালতের সামনে পেশ করা হয়নি।
হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের দীর্ঘদিনের উৎকণ্ঠার অবসান হলো। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছে, তবে জীবন-জীবিকা এবং শিক্ষাব্যবস্থার স্থিতাবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েই এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন