Top News

এসআইআরের অত্যাচারেও বাংলাকে দমানো যাবে না: ব্যবসায়ী সম্মেলন থেকে তোপ মমতার

এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে তৈরি হয়েছে অস্বস্তির আবহ। গত ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া নিয়ে সিংহভাগ রাজ্যবাসীই উদ্বিগ্ন। নির্বাচন কমিশনের তাড়াহুড়ো, বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) ক্ষোভ, রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ–পালটা অভিযোগ এবং গেরুয়া শিবিরের নেতানেত্রীদের ‘বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার’ হুমকি—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কার্যত ডামাডোলের। সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ, প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় সহ এসআইআর সংক্রান্ত কাজেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এই পরিস্থিতিতে ফের একবার এসআইআরের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ‘কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনের মঞ্চ থেকে দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন,
“এসআইআরের অত্যাচারেও বাংলাকে দমানো যাবে না।”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলায় একদিকে এসআইআরের চাপ চলবে, অন্যদিকে চলবে জেলায় জেলায় মেলা, বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের উদযাপন। তারপর রয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা, দোল, রমজান মাস। এরপরেই এসে যাবে বিধানসভা নির্বাচন। সাধারণ মানুষ একজোট হয়ে থাকলেই সব চক্রান্ত ব্যর্থ হবে।”

বণিক মহলের সভা থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন মমতা। নোটবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নোটবন্দি করলেই নাকি দেশের নগদের সমস্যা মিটে যাবে—কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। ভারত কোনও নগদবিহীন অর্থনীতির দেশ নয়। মানুষের হাতে টাকা থাকলেই অর্থনীতির চাকা ঘোরে।”
তিনি আরও জানান, রাজ্যে ৯৫টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। কেন্দ্রের নীতি আয়োগের তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বাংলায় বেকারত্ব প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, “বাংলার প্রাপ্য এখনও ১ লক্ষ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বহু গঞ্জনা ও লাঞ্ছনা সহ্য করেও রাজ্য নিজের খরচে একাধিক প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। অনেকে বলেন রাজ্য সরকার ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে, কিন্তু আমরা যে নিয়ম ও আর্থিক শৃঙ্খলা মেনেই ঋণ নিই, সে কথা কেউ উল্লেখ করে না। যারা দুষ্টুমি করে, তাদের দুষ্টু–মিষ্টি ওষুধও দিতে জানি আমরা।”

ব্যবসায়ী মহলের স্বার্থে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, খুব শীঘ্রই গঠিত হবে ‘পশ্চিমবঙ্গ ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড’। এই বোর্ডে সরকারি প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। জেলা স্তরের চেম্বার অব কমার্সগুলিকেও এই পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বোর্ডে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা থাকবেন এবং সিঙ্গল উইন্ডো ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধান করা হবে।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বোর্ডের সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করা হবে এবং তার পরবর্তী সাত দিনের মধ্যেই পর্ষদ গঠন সম্পূর্ণ হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি কলকাতা ও শিলিগুড়িতে ব্যবসা ও রপ্তানি সংক্রান্ত দুটি সুবিধাকেন্দ্র এবং একটি ‘বিজনেস টু বিজনেস হাব’ গড়ে তোলার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এছাড়াও তিনি জানান, রাজ্যের ১০টি জেলায় শপিং মল নির্মাণের টেন্ডার ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি ১৩টি জেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য বণিক মহলের কাছে আবেদন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন