রতের জনবহুল রাজ্য বিহারের এক সীমান্ত জেলা সীতামারি থেকে যে খবরটি উঠে আসছে, তা শুধু রাজ্য প্রশাসন নয়, গোটা দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন ফেলে দিয়েছে। এই মুহূর্তে সীতামারি পরিণত হয়েছে এইচআইভি (HIV) সংক্রমণের এক হটস্পটে। সরকারি নথি অনুযায়ী, এই ছোট জেলাটিতে প্রায় ৭,৪০০-রও বেশি মানুষ এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, যা দেশের মধ্যে এই রোগের এক নীরব কিন্তু ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, আক্রান্তদের মধ্যে ৪০০-র বেশি শিশুই রয়েছে, যা এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য সঙ্কটের গভীরতা স্পষ্ট করে তোলে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুল সংখ্যক সংক্রমণের পেছনে রয়েছে একাধিক সামাজিক ও ভৌগোলিক কারণ। সীতামারি নেপাল সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এখানে আন্তঃসীমান্ত মানব পাচার এবং যৌনকর্মীদের অবৈধ আনাগোনা প্রায়শই ঘটে। এছাড়াও, স্থানীয়দের মধ্যে কম শিক্ষিত এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞান প্রায় নেই বললেই চলে। ফলস্বরূপ, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক এবং সিরিঞ্জ বা রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অসাবধানতার মতো বিষয়গুলি এই রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। অনেক সময় রোগীরা সামাজিক লাজ-ভয়ের কারণে বা সঠিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবে পরীক্ষা করাতে চান না, ফলে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এই চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান সামনে আসার পর স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সীতামারিতে বিশেষ স্বাস্থ্য ক্যাম্প এবং সচেতনতা শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও, এই বিপুল সংখ্যক রোগীর জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো জোগানো এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ যত্ন এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সরকারি পরিসংখ্যানে যা দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই এই সীমান্তে দ্রুত আরও কঠোর নজরদারি, ব্যাপক সচেতনতা অভিযান এবং আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত না করা গেলে, এই নীরব সংক্রমণ শুধু সীতামারিতেই নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন