Top News

SIR-এর ফর্ম নেবেন না মমতা! কেন এই নাটকীয় প্রত্যাখ্যান?

পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যখন নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং এই প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র এনআরসি আতঙ্ক বিরাজ করছে, ঠিক তখনই এই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিলেন এক চরম নাটকীয় অবস্থান। সাধারণ মানুষের মনের ভয় ও আশঙ্কাকে যেন নিজের ব্যক্তিগত প্রতিবাদের মাধ্যমে তিনি প্রকাশ করলেন।

জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, বুথ লেভেল অফিসার (BLO) স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবন-সংলগ্ন অফিসে গিয়ে ভোটার তথ্য সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় এন্যুমারেশন ফর্ম দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এর পরপরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রচারিত হয় যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁর বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে ফর্মটি গ্রহণ করেছেন। এই খবরকে সম্পূর্ণ 'মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার' বলে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যদিও বিএলও এসেছিলেন এবং অফিসে ফর্ম জমা দিয়ে গেছেন, তিনি নিজে হাতে সেই ফর্ম নেননি বা পূরণ করেননি।
তাঁর এই ফর্ম পূরণ না করার কারণটিই এখন রাজনৈতিক আলোচনার প্রধান বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন, "যতক্ষণ না বাংলার প্রতিটি মানুষ এসআইআর-এর ফর্ম পূরণ করছেন, আমি নিজে কোনো ফর্ম পূরণ করব না।" এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আসলে রাজ্যের সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি নিজের সংহতি প্রকাশ করলেন, যারা এই ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়াটিকে এনআরসি-র 'পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ' বলে মনে করছেন এবং নাগরিকত্ব প্রমাণের ভয়ে ফর্ম পূরণ করতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বোঝাতে চাইলেন যে, এই রাজ্যবাসীর পাশে তিনি আছেন, এবং এককভাবে তিনি নিজের নাগরিকত্ব বা ভোটার পরিচয় প্রমাণ করতে রাজি নন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজ্যের প্রান্তিক মানুষ এই কাজ শেষ করতে না পারছেন।

যদিও নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য 'চিহ্নিত ভোটার'দের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য আপডেট হয় এবং তাদের ব্যক্তিগতভাবে এই এন্যুমারেশন ফর্ম পূরণ করার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনি স্বস্তিটুকুও গ্রহণ না করে, এটিকে একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "দাঙ্গাবাজদের দলের কাছে কি আমার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে?" এইভাবে তিনি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।

অর্থাৎ, এই এন্যুমারেশন ফর্ম গ্রহণ না করার ঘটনাটি কেবল একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অমান্য করা নয়—এটি বাংলার রাজনীতিতে এক মাস্টারস্ট্রোক, যার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের আতঙ্ককে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এবং নিজেকে সাধারণ মানুষের 'প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন