১২ এপ্রিল ২০২৫: ভারত সরকার হঠাৎ করেই বাংলাদেশের জন্য চালু থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে রপ্তানিকৃত পণ্য ভারতীয় স্থলবন্দর হয়ে সমুদ্রবন্দর বা বিমানবন্দরের মাধ্যমে পাঠাতে পারত। ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক বোর্ড (CBIC) থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাটি ২০২০ সালে কার্যকর হয় এবং এটি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে একটি বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করছিল। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে সময় এবং খরচ দুই দিক থেকেই এটি ছিল একটি লাভজনক পথ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের একাধিক স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্য দ্রুত ও কার্যকরভাবে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হতো।
তবে CBIC-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ব্যবস্থার ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সময়মতো পণ্য প্রেরণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, অতিরিক্ত পণ্য প্রবাহের কারণে ভারতীয় বন্দরগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে জট ও ব্যয়বৃদ্ধির সমস্যা।
এসব কারণ দেখিয়ে ভারত কর্তৃপক্ষ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত, যা দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে, বেশিরভাগ পণ্যই ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বাজারে পাঠানো হয়। ভারতের বন্দর ব্যবহারের ফলে পরিবহন সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। এখন এই সুবিধা বাতিল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা নতুন করে পরিবহন পথ নির্ধারণ করতে বাধ্য হবেন, যা খরচ ও সময় দুই-ই বাড়াবে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (SANEM)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “ভারতের এমন সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বহির্বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরে ভারতের এই পদক্ষেপ আমাদের জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করবে।”
বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে বাংলাদেশকে বিকল্প বন্দর ও পরিবহন পথ অনুসন্ধান করতে হবে। একই সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক চ্যানেল জোরদার করে ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।এদিকে ব্যবসায়ী মহল থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। এটি শুধু একটি রপ্তানি ব্যবস্থা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ পথকেও প্রভাবিত করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, কূটনৈতিক স্তরে বাংলাদেশ কিভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে এবং রপ্তানি বাণিজ্যকে স্থিতিশীল রাখে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন