ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ : ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা আবারও শুরু হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই সংলাপ দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন দূর করে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্যোগে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর, যিনি গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন। দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে।
শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সেই সম্পর্কের টানাপোড়োন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। ড. ইউনুস প্রকাশ্যে ভারতকে সমালোচনা করে বলেছেন, তাঁরা শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এরই মাঝে ভারত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে, শুধুমাত্র চিকিৎসাজনিত জরুরি প্রয়োজনে তা প্রদান করা হচ্ছে। আরও প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যখন চলতি মাসের শুরুতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পণ্য তৃতীয় দেশে রপ্তানি করত ভারতীয় অবকাঠামো ব্যবহার করে। এতে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেপাল, ভূটান এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যে খরচ বাড়বে।এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েক মাসে ড. ইউনুস একাধিকবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। জানুয়ারিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশি সামরিক প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সফরে গিয়ে জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে আলোচনা করেন। এমনকি ফেব্রুয়ারিতে করাচির উপকূলে পাকিস্তান আয়োজিত নৌ মহড়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী অংশগ্রহণ করে।
বৃহস্পতিবারের সংলাপে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত কথিত নৃশংসতার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি পুনরায় তোলা হয়। পাশাপাশি দুই দেশ কৃষি, বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বহু বছর পর সরাসরি বাণিজ্য পুনরায় শুরু হয়েছে। ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে এবং শিগগিরই সরাসরি ফ্লাইট চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে একটি বড় মোড় নির্দেশ করছে। একদিকে বাংলাদেশের ভারত-নির্ভর নীতির পরিবর্তন, অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা — এই সবকিছুই ভবিষ্যতের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন