উত্তরবঙ্গের কৃষ্টি ও লোকসংস্কৃতিতে অন্যতম জায়গায় রয়েছেন মাশান দেব। রাজবংশীদের মতে, মা কালীর আঠেরো সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান হলেন মাসান ঠাকুর। মায়ের মতোই এই সন্তানও পুজো পান মঙ্গলবার, শনিবার অথবা অমাবস্যা তিথিতে। তবে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের মাশান দেবতার মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণ লোকাচারে আটিয়া কলা, চিঁড়া, দই ইত্যাদি দিয়ে দেবতাকে ভোগ নিবেদন করা হয়।
মাসান বাবার জন্মকথা:
‘‘নাচিতে নাচিতে কালী, / চুইয়া পড়ে ঘাম,/ তাতে সৃষ্টি হইল,/ এ জলা মাসান।’’
লোক মুখে প্রচলিত, মাসান ঠাকুরের জন্মভাদ্রমাসের শনিবার। যেহেতু জলে জন্ম, তাই ধাই মা মাসানের নাড়ীকুন্ডলী জলে ফেলে দেয়। আর সেখান থেকেই ধারণা কলমি শাকের জন্ম হয়। ভাদ্র মাসে, রাজবংশীরা মাসান বাবার উদ্দেশ্য করে এই কলমি শাক খান না।
এ প্রসঙ্গে একটি ছড়া বিশেষ ভাবে প্রচলিত রয়েছে গ্রামে-গঞ্জে — ‘‘ভাদর মাসে কলমু শাকে যে বা জন খায়।/ মাসানের নাড়ি সে অবশ্য চাবায়।’’
মাসান ঠাকুরের এই বিকট দর্শন লক্ষ্য করা যায়। তবে এক এক জায়গায় তাঁর রূপ এক এক ভাবে প্রতিফলিত হয়।কোথাও বুকের মধ্যেই মুখ, প্রলম্বিত এক জিহ্বা। কোথাও বিশালাকার ভুঁড়ি, ক্রুড় দৃষ্টি। কোথাও মৎস পৃষ্ঠে আসীন হয়ে রয়েছেন, কোথাও শূকর পৃষ্ঠে। তাঁর পুজোয় ভক্তির চেয়ে দেখা যায়, ভয় ও তুষ্টির দিকে লক্ষ্য থাকে বেশি মানুষের।এই বঙ্গে মোট আঠেরো প্রকার মাসান পুজো পান। প্রত্যেকে ক্ষেত্রেই যেটা লক্ষ্যনীয়, তা হল কেউ অপরাধ বা অন্যায় করলে বা তাদেরকে একা পেলে মাসান বাবা তাদের ধরেন বা তাদের উপর ভর করেন। দিন বা রাত, নিঝুম দুপুর বা ভর সন্ধ্যাবেলা নজরে পড়ে গেলেই হল। মাসানের কোপ বা দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির লোক শনি বা মঙ্গলবারে কিংবা অমাবস্যা তিথিতে বাবার থান বা মন্দিরে গিয়ে বড় করে বাবাকে পুজো করেন।
লৌকিক সন্তান মাসান বাবার তুষ্ট মন্ত্র দিয়েই এই প্রতিবেদনে ইতি টানব—‘‘নমঃ নমঃ মাসান দেব, / নমঃ কালী পুত্র, / কৃষ্ণ আদেশ পায়া , / তোককরিম যে তুষ্ট।’’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন