রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর তার বাড়িসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১৪টি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হামলার শিকার পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আতঙ্কে অনেক পরিবার গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য মালামাল ভ্যানে করে সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ধান বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। আলদাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও ভেতরে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। পাশাপাশি খিলালগঞ্জ বাজারেও পুলিশ ও সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানবী (সা.)–কে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে কিশোরটিকে আটক করা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে তাকে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কিশোরটিকে থানায় নেওয়ার পর উত্তেজিত জনতা তার বাড়ির সামনে মিছিল করে এবং তার এক স্বজনের বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রবিবার বিকেলে আবার উত্তেজিত জনতা কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ হয় এবং তাতে এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা কমলাকান্ত রায় জানান, তারা সারা রাত ঘুমাননি এবং সকাল থেকে বাড়ির মালামাল সরাচ্ছেন। ধান বিক্রি করতেও নিয়ে যাচ্ছেন। তার বাড়ির সামনে থাকা দু’জন নারী জানান, তারা তারাগঞ্জ থেকে স্বজনদের দেখতে এসেছেন, তবে নাম প্রকাশ করতে চাননি। এক নারী বলেন, “ওরা না খেয়ে আছে, ভাত খাওয়ানোর কথা বললে বলে, ভেতরে ভাত যাইব না।”
হামলার শিকার পরিবারের অভিযোগ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ছাড়াও মালামাল লুট হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, তার স্ত্রীর এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়-চোপড় ও জমির কাগজপত্র লুট হয়েছে। তার স্ত্রী রোহেলা রানি জানান, যদি আবার আগুন দেয়, তবে আর কিছুই থাকবে না। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আত্মীয়রাই সরিয়ে নিচ্ছেন।
আলদাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের আশপাশেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুইটি বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল না। প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় জানান, বিদ্যালয়ের ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সনাতন ধর্মাবলম্বী। গতকাল ছুটি দেওয়া হয়েছিল, আজ কেউ আসেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায় বলেন, দুপুরের পর আবার মিছিল আসার হুমকি এসেছে। আতঙ্কে অনেক পরিবার স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
ওসি আল এমরান জানান, রবিবারের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন