Top News

গঙ্গাচড়ায় হামলার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত শুরু, মামলার দাবিতে ক্ষোভ

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এক কিশোর গ্রেপ্তারের ঘটনায় সংঘটিত সহিংসতায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি বসতবাড়ির মেরামত শুরু হয়েছে প্রশাসনের উদ্যোগে। তবে ঘটনার তিন দিন পরও এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে আটকও করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার হিন্দু-অধ্যুষিত আলদাদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুর হওয়া বাড়িগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত টিনের বেড়া খুলে নতুন টিন লাগানো হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায় জানান, সোমবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল ও পুলিশ সুপার আবু সাইম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁদের নির্দেশে মঙ্গলবার সকালে টিন, কাঠ, নলকূপ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো হয়। সকাল থেকে ৩০ জন কাঠমিস্ত্রি মেরামতের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

গঙ্গাচড়া থানা সূত্র জানায়, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে আলদাদপুর গ্রামের এক কিশোর ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়। অভিযোগ যাচাই করে রাতেই তাকে আটক করা হয় এবং রোববার দুপুরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে বাড়ির সামনে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে আরেকটি মিছিল কিশোরের এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রোববার বিকেলে আবারও উত্তেজিত জনতা হামলা শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়, এতে এক কনস্টেবল আহত হন। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৫টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, “ভাঙচুর হওয়া ঘরগুলো দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। ৩টি পরিবার ছাড়া বাকি সবাই ফিরেছেন। টিন, কাঠ, নলকূপ ও রান্নার চুলা সহ সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।”

তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যদের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় হিরনবালা রানী বলেন, “কাপড়-চোপড়, জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে। ঘরের বেড়া ঠিক করলেও কী হবে?”
আরেকজন বাসিন্দা আজো বালা বলেন, “ভয়ে কাজ করতে পারছি না, ঘুমাতেও পারি না। মেয়েগুলো বড় হয়েছে, ওদের নিয়ে সবসময় চিন্তায় আছি।”

আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশেই এসব হামলার ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয় দুটিতে বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় জানান, “গতকাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস চালু হবে।”

এদিকে সোমবার রাত ১০টার দিকে পাশের নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা চেকপোস্ট এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল আলদাদপুরের দিকে আসার চেষ্টা করে, যা প্রশাসনের নজরে আসে। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি, তারা মাগুরায় বিক্ষোভ করে চলে গেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

তবে ঘটনার বিচার ও দায়ীদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক তপন কুমার বলেন, “পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। প্রশাসন যা করছে, আপাতত আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখছি। আমাদের অনেকেই এখনও বাড়ির বাইরে রয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত মামলা করা হবে।”

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন