Top News

ভাষা আন্দোলনের  রাজনীতির শুরু  রবি ঠাকুরের বাড়ি থেকে,  শাসক দলের গর্জনে কতটা সুরক্ষিত বাংলাভাষা?



ভিনরাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর লাগাতার নিপীড়ন, অসম্মান ও প্রশাসনিক উপেক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে রাজ্যে। সেই ইস্যুকে সামনে রেখে রাজপথে  রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। ‘বাংলা ভাষার মর্যাদা’ রক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন’ যা প্রতি সপ্তাহে শনি ও রবিবার রাজ্যজুড়ে গর্জে উঠবে মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে, এমনটাই জানাচ্ছেন তারা। এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কবিগুরুর বোলপুর।


রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর আগমন ঘিরে গোটা বোলপুর শহরজুড়ে নিরাপত্তার চাদর। শুধু রাজনীতির বার্তাই নয়, প্রশাসনিক পর্যালোচনাও থাকছে তাঁর সফরে। সোমবার দুপুরে ‘গীতাঞ্জলি’ সভাঘরে বসবে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কর্মশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। তবে প্রশাসনিক কার্যকলাপের পাশাপাশি সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আয়োজিত হবে বিশাল ভাষা আন্দোলনের মিছিল। ট্যুরিস্ট লজ মোড় থেকে জামবনি মোড় পর্যন্ত, প্রায় তিন কিলোমিটার পথজুড়ে বাংলার দাবি, প্রতিবাদ এবং প্রতিজ্ঞার ধ্বনি। মিছিল শেষে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মাল্যদান ও অস্থায়ী মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে গর্জে উঠবে ভাষা রক্ষার বার্তা।

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে কাজের জায়গায় হেনস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ভাষাভিত্তিক বৈষম্যের একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে শুরু করে এক্স হ্যান্ডেলে ধারাবাহিক বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বাংলাভাষার উপর আঘাত মানেই বাঙালির আত্মসম্মানে আঘাততা কখনও বরদাস্ত করা হবে না।

এই ভাষা-ভিত্তিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে বাংলাভাষীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হেনস্থা করা হচ্ছে বলেই দাবি করেছে তারা। সেই রিপোর্ট শেয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “এটা শুধু নিন্দনীয় নয়, ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী।”

তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ভাষা ও সংস্কৃতির এই আন্দোলনের অন্তরালে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক কৌশল। ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালি আবেগ ও আঞ্চলিক গর্বকে হাতিয়ার করে সংগঠন মজবুত করার প্রচেষ্টা স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে এই আন্দোলন কি সত্যিই বাংলাভাষার সুরক্ষার প্রয়াস, নাকি নির্বাচনী ক্যালেন্ডার মাথায় রেখে তৈরি এক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল? বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অপমান কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষার দাবিকে হাতিয়ার করলে সেই দাবি আদৌ কতটা বাস্তবিক ফল দেবে, আর কতটা পরিণত হবে কেবল আবেগের পুঁজি তা ভবিষ্যতের জন্য তোলা রইল। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন