রাজস্থানের ঝালাওয়ারের মানোহার থানার পিপলোদি সরকারি স্কুলে প্রার্থনার সময় আচমকাই ভেঙে পড়ল একতলা স্কুল ভবনের ছাদ। আর তাতেই প্রাণ গেল একের পর এক স্কুলপড়ুয়ার। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। প্রায় ৬০ জন পড়ুয়া, শিক্ষক ও কর্মচারী তখন স্কুল প্রাঙ্গণে প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছিলেন। আচমকা ছাদ ভেঙে পড়তেই নিমেষে স্কুলের চতুর্দিক আর্তনাদে ছেয়ে যায়। একাধিক শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক ও স্কুল কর্মীরা একযোগে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত পৌঁছে যায় স্কুল চত্বরে।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় অন্তত ৭ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। আরও কয়েকজন গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি। আশঙ্কাজনকদের দ্রুত ঝালাওয়ারের বড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, বহু দিন ধরেই স্কুল ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে ছাদ আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। স্থানীয়দের দাবি, বহুবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সতর্ক করা হলেও সংস্কারের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে এই অবহেলার দায় কে নেবে?প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স হ্যান্ডেলে এই দুর্ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” বলে বর্ণনা করেছেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেছেন, এই কঠিন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছে সরকার। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তিনি জানান, উদ্ধার ও চিকিৎসা খাতে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে নতুন করে উঠে এসেছে স্কুল ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। রাজস্থানের বহু সরকারি স্কুল ভবনই যে বছরের পর বছর ধরে সংস্কার বঞ্চিত হয়ে পড়ে আছে, তা আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল এই দুর্ঘটনার মাধ্যমে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে সমস্ত স্কুলের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলিকে মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এলাকার অভিভাবক ও বাসিন্দাদের প্রশ্ন, শিশুদের জীবনের সঙ্গে এমন হেলাফেলা আর কত দিন চলবে? মৃতদের পরিবারের কান্নায় মুখরিত ঝালাওয়ারের এই স্কুল এখন পুরো রাজ্যকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। স্কুলের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ যে আর অবহেলার বিষয় নয়, তা ফের একবার মনে করিয়ে দিল এই মর্মান্তিক বিপর্যয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন