বয়স মাত্র আট মাস। হামাগুড়ি দেওয়ার বয়সেই বাবার নির্মম নির্যাতনের শিকার হল এক শিশু। তাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে গ্রামের পথে পথে ঘুরল বাবা। চিৎকার করে নিজেকের স্ত্রীকে গালাগালি করছিল সেই সময়। চোখের সামনে বাবার এমন পাশবিক নির্যাতনের মুহূর্তটি দেখে শিউরে উঠেছেন গ্রামবাসীরা।
জানা গেছে, স্ত্রী থেকে পণের দাবি করেছিল স্বামী। এদিকে চরম আর্থিক অনটনে ছিলেন তরুণী। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যা যা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির তরফে দাবি করা হয়েছিল, তা দিতে সম্পূর্ণ অপারগ তিনি। পণ দিতে না পারায় চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই গৃহবধূও। এবার বাদ পড়ল না তাঁর কোলের সন্তানটিও।
গ্রামের পথে পথে নিজের শিশুসন্তানকে উল্টো করে ঝুলিয়ে ঘোরাল বাবা। চিৎকার করে নিজেই গ্রামবাসীদের পথে জড়ো করে সে। এও জানায়, তার শুধুমাত্র টাকা চাই। টাকা না পেলে আরও অত্যাচারের শিকার হবে মা ও সন্তান। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের রামপুর জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, আট মাসের এক শিশুকে উল্টো করে ঝুলিয়ে গ্রামের চারিদিকে ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে তার বাবার বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র নিজের স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপরে পণের জন্য চাপ সৃষ্টি করতেই নিজের শিশুসন্তানকে অত্যাচার করে বাবা।
সেই মুহূর্তটি অনেকেই ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। যা সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি হু হু করে ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। ঘটনায় একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক করেছেন ওই শিশুটির মা। তিনি জানিয়েছেন, বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তেজনা ছড়াতেই তারা তদন্ত শুরু করেছে।
গৃহবধূ সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'দুই বছর আগে, ২০২৩ সালে আমার বিয়ে হয়েছিল। আমার পরিবার খুব গরিব। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে আসার পর থেকেই স্বামী, দেওর ও ভাসুর সকলেই আমাকে মারধর করত। নিত্যদিন চাপ দিত, পণ হিসেবে দুই লক্ষ টাকা এবং গাড়ি যেন তাদের দেওয়া হয়। সেই পণ না দেওয়ায় নিত্যদিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হত।'
তরুণী আরও জানিয়েছেন, 'আমার এক ছোট সন্তান রয়েছে। মাত্র আট মাস বয়স। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছে না। আমার কাছেই ওরা পণ চেয়েছিল। না দিতে পারায়, আমার সন্তানকে অত্যাচার করছে। আমার সন্তানকে উল্টো করে ঝুলিয়ে গোটা গ্রামের পাক খায় স্বামী। মোট চারবার ওই গ্রামটি ঘুরেছে সে। আমার শিশুর শারীরিক অবস্থা ভাল নেই। সে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। গ্রামের সবাই সেই দৃশ্য দেখেছেন।'
তরুণী এও জানান, 'ঘটনার সময় গ্রামবাসীদের ভিডিও করতে বলে স্বামী। চিৎকার করে বলতে থাকে, তার শুধুমাত্র টাকা চাই। কিন্তু আমার কাছে তো অত টাকা নেই। কোথা থেকে জোগাড় করব আমি? আমাকে তো মারধর করত। বাদ পড়ল না শিশুও। পুলিশ এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমি চাই ওদের গোটা পরিবারকে জেল হেফাজতে নেওয়া হোক।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন