Top News

"কেউ অত্যাচার করেনি"-IIM ধর্ষণ-কাণ্ডে নির্যাতিতার বাবার বয়ানে বাড়ছে রহস্য

 


কসবার পর জোকার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) কলকাতা ক্যাম্পাসে তরুণীকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতি যখন সরগরম, তখনই নাটকীয় মোড় নিল ঘটনা। অভিযোগকারিণীর বাবা সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে কোনও খারাপ কিছু ঘটেনি এবং তাঁকে ধর্ষণ করা হয়নি।তাঁর এই ‘ইউ-টার্ন’ মন্তব্য পুরো ঘটনাকে নতুন করে ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

শুক্রবার সকালে জোকা আইআইএম-এর ক্যাম্পাসে এক তরুণীকে ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে বেহুঁশ করে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় আইআইএম-এর দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে গ্রেফতারও করা হয়। রাজ্যের সর্বত্র এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযোগকারিণীর বাবা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে যা বললেন, তা রীতিমতো চমকে দিয়েছে সকলকে।



তিনি দাবি করেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মেয়ে অটো থেকে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং তাকে এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন যে, হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। বাবার দাবি, তাঁর মেয়ে তাঁকে জানিয়েছে যে, তার সঙ্গে ধর্ষণের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি, এমনকি শারীরিক নির্যাতনেরও কোনও ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও জানান, তাঁর মেয়ে বাড়িতে ফেরার পর স্পষ্ট জানিয়েছে, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।

তবে, তরুণীর বাবা এও স্বীকার করেছেন যে, তাঁর মেয়ে এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়ায় বা ঘুমিয়ে থাকার কারণে তার সঙ্গে তিনি পরিষ্কারভাবে কথা বলতে পারেননি। হরিদেবপুর থানার পুলিশ তাঁর মেয়েকে কোথা থেকে উদ্ধার করেছে, সে বিষয়েও তিনি ওয়াকিবহাল নন বলে জানিয়েছেন। এমনকি, থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেটিও তাঁর মেয়ে করেনি বলে তিনি দাবি করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কেন হরিদেবপুর থানায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল? পুলিশের হাতে থাকা অভিযোগপত্রে স্পষ্ট লেখা আছে যে, জোকা ক্যাম্পাসের বয়েজ হোস্টেলে তরুণীকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কর্নাটক থেকে আসা ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তরুণীর বাবা জানান, তাঁর মেয়ে কোথায় গিয়েছিল বা কেন অভিযোগ করেছিল, তা তিনি জানেন না।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতেই জোকার আইআইএম কলকাতা ক্যাম্পাসে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ছিল, হোস্টেলের ফাঁকা ঘরে নিয়ে গিয়ে তরুণীর উপর যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। কসবার ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই আইআইএম-এর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগ ওঠায় লালবাজারের কর্তারা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছিলেন। অভিযুক্ত ছাত্রের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণীর যোগাযোগ হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। তরুণীর বাবার এই মন্তব্য তদন্ত প্রক্রিয়া ঘিরে নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে এবং মেয়েটি আদৌ কোনও অপরাধের শিকার হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে আইআইএম কলকাতা কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, “আমাদের একজন ছাত্রের সঙ্গে জড়িত একটি গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। অভিযোগকারিণী প্রতিষ্ঠানের সদস্য নন। আমরা এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি এবং তদন্তের দায়িত্বে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”

এই ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন