রাখী-বন্ধন। শ্রাবণ মাসের এই পূর্ণিমায় রাখী পালিত হয় দেশ জুড়ে। প্রধানত ভাইয়ের মঙ্গল চেয়ে বোনেরা হাতে এই 'রক্ষা' তন্তু বেঁধে দেন। কিন্তু বাঙালির এই রাখী-বন্ধন উৎসবের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের!
বাঙালির রাখী-বন্ধন হোক, বা উপমহাদেশের রক্ষা-বন্ধন, এই উৎসবের চর্চা বহুদিনের। এমনকি এই দেশের 'এপিক' মহাভারতেও উল্লেখ রয়েছে রাখীর। বাঙালির মননে, চিন্তনে সচেতনভাবে ভ্রাতৃত্ব বোধ জেগে উঠেছিলো এই রাখীর মাধ্যমেই। যার কাণ্ডারি বাঙালির স্তম্ভ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তখন বাংলা অগ্নিগর্ভ, অস্থির। ভাইসরয় লর্ড কার্জন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলা বিভক্ত করার। ১৯০৪ সালে এই ঘোষণা সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লো জনতা। ছড়িয়ে পড়লো জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথের ক্ষুরধার কলম থেকে স্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হয় নানা কবিতা,গান। "আমি ভয় করবো না/ দুবেলা মরার আগে মরবো না।" ওই সময়েরই রচনা।
১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর পালিত হলো রাখী-বন্ধন। উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু-মুসলমান সহ প্রত্যেকের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা। উদ্যোক্তা ছিলেন প্রধানত রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিন চন্দ্র পাল, ভূপেন্দ্রনাথ বসু সহ আরো কেউ কেউ। পাশাপাশি ঠিক হলো ওইদিন মহিলারা বাড়িতে 'অরন্ধন' পালন করবেন। বাবুঘাটে গঙ্গাস্নানের পর শুরু হলো আলিঙ্গন, রাখী পরানো। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলে কোলাকুলি করলেন। সকলের সঙ্গে যোগ দিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। এই বিপুল আন্দোলনে খানিক নড়েচড়ে বসেছিলেন ব্রিটিশ সরকার।
যদিও কবিগুরুর এই রাখীর সঙ্গে শ্রাবণী পূর্ণিমার রাখীর কোনও সম্পর্ক নেই, তবু বাংলার নিরিখে যদি 'রাখী'র প্রসঙ্গ ওঠে, রবীন্দ্রনাথ অবলীলায় চলে আসেন সেইখানে। হয়তো অবচেতনেই ভেসে ওঠে,"বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।।"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন