Top News

লাদাখে রক্তাক্ত বিক্ষোভ: সংঘর্ষে মৃত্যু চারজনের, জারি করা হল কারফিউ

লাদাখকে রাজ্য ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালীন সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে চার জনের, আহত হয়েছেন বহু মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে জারি করা হয়েছে কারফিউ।


২৪ সেপ্টেম্বর লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রদানের দাবিতে লেহ-এর রাস্তায় জমায়েত হন হাজারো বিক্ষোভকারী। প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ চললেও, সূত্র মারফত জানা যায় পরবর্তীতে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী প্রশাসনিক ভবন, দফতর ও বিজেপির একটি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের বাঁধা দিতে গিয়ে পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন অবিলম্বে লেহ ও কার্গিল জেলায় জনসমাবেশ সীমাবদ্ধ করেছে, এবং আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেহে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং ৫ জন বা তার বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর বলেন, “এই দুর্ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কারফিউ জারি করা হয়েছে যাতে আর প্রাণহানি না ঘটে।” 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল এবং বিক্ষোভকারীদের একাংশ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সেই মুহূর্তে আত্মরক্ষার্থেই পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। এই বিবৃতিতেই বলা হয়, গত কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে প্ররোচনামূলক বক্তৃতা ও স্লোগান পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছিল, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে সংঘর্ষের দিনে। প্রশাসনের মতে, ওই বক্তৃতা ও প্ররোচনার ফলে জনতার একটি অংশ উগ্র হয়ে ওঠে।

রাতভর টহল ও নিরাপত্তার ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ যোগাযোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। সম্ভাব্য অস্থিরতা মোকাবিলায় প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। এই সংঘর্ষ লাদাখের রাজনৈতিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করে। কেন্দ্রীয় সরকার ও লাদাখের স্থানীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে নতুন দফার বৈঠক আগামী ৬ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নির্ধারিত হয়েছে।

বহু বছর ধরে পদযাত্রা ও অনশনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চললেও সাম্প্রতিক ঘটনায় তরুণ সমাজের একাংশ ক্রমশ হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকদের মতে, সেই হতাশা থেকেই আন্দোলন সংঘর্ষের রূপ নেয়। গত সপ্তাহে ১৫ জন অনশনে অংশ নিলেও ২৩ সেপ্টেম্বরের আগে দু’জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, যার ফলে পরবর্তী দিন অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে বিক্ষোভের আকার আরও তীব্র হয়ে ওঠে। 

এ বিষয় আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি ও সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক জানান— “আমি চাই সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের এই বার্তাকে শুনুক। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মিছিল এড়িয়ে দিলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।” তবে কেবলমাত্র পূর্ণ রাজ্যের দাবি নয়, পাকিস্তান ও চীন সীমান্তের সঙ্কট, প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি ও জমি অধিকার সহ নানান দাবি এই আন্দোলনের পেছনের দীর্ঘস্থায়ী কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন