ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাংকিং ফ্রেমওয়ার্ক (NIRF) ২০২৫ অনুযায়ী, এ বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ‘স্টেট পাবলিক ইউনিভার্সিটি’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, সমগ্র দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ও ছাত্রছাত্রীদের এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিক এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রী মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে।
১২ই সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল নাট্যকেন্দ্রের আয়োজিত তিন দিনের উৎসব। সেদিনই রাত প্রায় ১০টা নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলপাড় থেকে উদ্ধার করা হয় ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে, মৃত্যু হয়েছে ডুবে যাওয়ার কারণে। যদিও অনামিকার বাবা অর্ণব মণ্ডল সরাসরি প্রশ্ন করেন, “মেয়ে সাঁতার জানত না। যাঁদের সঙ্গে কথা বলত, মিশত, বন্ধু ছিল, সেদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যারা ছিল, যেই প্রফেসর মেয়ের ব্যাগ আমাকে দিয়েছিল, সকলকে পুলিশের জিজ্ঞাসা করতে হবে। মেয়ে ব্যাগ সবসময় নিজের কাছে রাখত। আমাদেরও হাত দিতে দেয় না। তাই সেই প্রফেসর ব্যাগ কীভাবে পেল অবশ্যই জানা দরকার। এক বন্ধু নাকি সেই ব্যাগ দিয়েছে। সেই বন্ধু কে?” তিনি দাবি করেন, অনামিকার ব্যাগ একেবারেই ভেজেনি যা ঘটনার অস্বাভাবিকতার একটি স্পষ্ট প্রমাণ, ফলে তিনি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন।
ঘটনার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে নতুন করে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা জানিয়েছে। এবিষয়ে সার্কুলারে জানানো হয় যে, রাত ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বাইরের লোকের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.ডি. কার্ড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে মাদক ও মাদক দ্রব্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ধরনের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান যে বহু আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও, উপাচার্য না থাকায় তা কার্যকর হয়নি।
ঘটনার পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলি নিরাপত্তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। একদিকে নিরাপত্তাহীন পরিবেশকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে DSF, অন্যদিকে বিজেপির ছাত্র সংগঠন ABVP অভিযোগ জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের বিষয়ে।
তবে এটি প্রথম নয়, ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট রাতে বয়েজ হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর। ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুতে তোলপাড় হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সময় উঠে আসে হোস্টেলে র্যাগিং, নিরাপত্তার ঘাটতি এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার প্রশ্ন। সেই ঘটনার পর থেকে বহুবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি উঠলেও বিশেষ কার্যকর হয়নি একাধিক পদক্ষেপ। অনামিকার মৃত্যুও সামনে এনেছে সেই প্রশ্নকেই।
শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরে কি সত্যিই ঘনাচ্ছে নিরাপত্তাহীনতার ছায়া?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন