Top News

ঝাপসা হচ্ছে আলো ও আড়ম্বর, তবে রয়ে গেল যে সেরা দশ পুজো প্যান্ডেলের স্মৃতি

রাত পেরোলেই কোজাগরী লক্ষী পুজো। বাংলার মানুষ বিদায় দিয়েছেন তাদের ঘরের মেয়ে উমাকে, অথচ এখনো যেন বাতাসে ভাসছে ধুনুচির গন্ধ, ফিরে ফিরে আসছে ঢাকের প্রতিধ্বনি। ঝাপসা হয়ে আসছে আলো সজ্জিত মণ্ডপ, নিভে যাচ্ছে শহরময় ছড়িয়ে থাকা রঙিন আলোর পর্দা। তবুও দর্শনার্থীদের মনে সুস্পষ্ট শহরের নানান প্যান্ডালের আলোছায়া, যেগুলো শহর কলকাতাকে করে তুলেছিল শিল্পীর এক বিশাল ক্যানভাস।

২০২৫-এর অন্যতম সেরা দশ বারোয়ারি পুজো—

১. ৬৬ পল্লী, দক্ষিণ কলকাতা:
থিম ছিল কেরালার লোকনৃত্য থেইয়াম। মণ্ডপের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই নৃত্যের রং ও ছন্দ। 
২. একডালিয়া এভারগ্রিন
থিমে ফুটে উঠেছিল তামিলনাড়ুর অরুণাচলেশ্বর মন্দির। মন্ডপসজ্জায় প্রকাশ হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের আভিজাত্য ও স্নিগ্ধতা।
৩. শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব:
থিম ছিল নিউ জার্সির স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দির। রঙের প্রলেপ থেকে আলোর জৌলুস, সব মিলিয়ে যেন তৈরী হয়েছিল অক্ষরধাম মন্দিরের প্রতিচ্ছবি। 
৪. সুরুচি সংঘ:
এবছর থিম ছিল আহুতি। বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে মণ্ডপের প্রতি দৃশ্যে। 
৫. বাগবাজার সার্বজনীন:
ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষী বাগবাজার। ২০২৫-এর পুজোতে সেই ছোঁয়া স্পষ্ট। পুরনো রীতি ও ঐতিহ্য যেন মণ্ডপের প্রতিটি কোণে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। 
৬. শোভাবাজার রাজবাড়ি
প্রতিবছরের মত এবারও পুরনো রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে ছিল প্রাচীনতার স্নিগ্ধতা। এখানে থিম নয়, ঐতিহ্যই মুখ্য। শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোতে আড়ম্বর নয় বরং ভক্তিই আসল। 
৭. সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার:
থিম ছিল ‘অপারেশন সিন্দূর’। থিমের মধ্যে দিয়ে সেনার দেশপ্রেম ও ত্যাগকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল।
৮. বাদামতলা আষাঢ় সংঘ:
থিম ছিল আর্জি। ন্যায় ও সত্যের জন্য মানুষের এক নীরব প্রার্থনা, এক নীরব আর্জি। আদালতের আদলে গড়া মণ্ডপে স্বয়ং দেবী যেন নিজেই বিচারকের আসনে বসেছেন। 
৯. টালা প্রত্যয়:
শতবর্ষের প্রেক্ষাপটে থিম ছিল ‘বীজ আঙন’। জন্ম, বপন, মাটির গন্ধ, এই সবকিছু মিলেমিশে এক জীবনের উৎসব। মণ্ডপের প্রতিটি কোণে ছিল নতুন শুরু ও আশার প্রতীক।
১০. কাশী বোস লেন
এবছর কাশী বোস লেনের থিম ছিল ‘পাকদণ্ডী’। মণ্ডপ জুড়ে ছড়িয়ে ছিল অমসৃন জীবনে মানুষের মুখোশ আর সম্পর্কের দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি। 

ক্রমশ নিঃশব্দ হবে শহরের উৎসব ধ্বনি। শহর ফিরবে তার দৈনন্দিন ব্যস্ততায়। তবুও যেন মনে হবে, আলো এখনো নিভে যায়নি, কেবল একটু দূরে সরে গেছে। পরের বছর আবার ফিরে আসবে, শিল্পের অন্য রূপ নিয়ে। ততদিন সুস্পষ্ট হয়ে থাকবে এই স্মৃতি, কারণ শিল্প কখনও শেষ হয় না, কেবল বদল হয় রূপ ও সজ্জা, তবে তার স্পর্শ থেকে যায় রাজপথ থেকে শহরের প্রতি গলিতে এবং মানুষের মনের নীরব প্রান্তে, এক স্থায়ী অনুরণনে। একইভাবে ২০২৫-এর এই প্যান্ডালগুলোর স্মৃতিও থেকে যাবে মানুষের মনে। কারণ দুর্গাপুজো কখনোই শুধু উৎসব নয়, এ এক চলমান শিল্প, যা প্রতিবার নতুন রূপে ফিরে আসে। যা স্পষ্ট করে যে সৌন্দর্য মানে কেবল দেখা নয়, অনুভব করাও।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন