Top News

বিক্ষোভে অশান্ত পাক অধিকৃত কাশ্মীর

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদসহ একাধিক শহরে টানা বিক্ষোভে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খাদ্য ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি ভর্তুকি এবং প্রশাসনিক বৈষম্যের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে।


পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জনঅসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে, অথচ মৌলিক পরিষেবা প্রায় অনুপস্থিত। বিশেষ করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ ও শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন। বহু দোকান ও বাজার বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বাধা অমান্য করে মিছিলের উদ্দেশ্যে রাস্তায় জমা হয়েছিল। জানা যাচ্ছে সংঘর্ষের সময় গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তত ৮ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পুলিশ ও স্থানীয় নাগরিক উভয়ই রয়েছেন।

ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ বিষয় এক বিবৃতিতে বলেছেন: “আমরা বিশ্বাস করি, এটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের দমনমূলক নীতির এবং এই অঞ্চলগুলির সম্পদকে সুসংগঠিতভাবে লুণ্ঠনের স্বাভাবিক পরিণতি, …। পাকিস্তানকে তার ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”

বিক্ষোভকারীরা ইতিমধ্যেই ৩৮ দফা দাবি পেশ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি হলো, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিধানসভায় পাকিস্তানে বসবাসকারী কাশ্মীরি শরণার্থীদের জন্য যে ১২টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে, তা বাতিল করা হোক এবং আঞ্চলিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও স্থানীয়রা এর সুবিধা পান না। এছাড়া তারা চান আগের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হোক।

প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। এবং বিক্ষোভ যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। তবে এর ফলে দৈনন্দিন জীবনে আরও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতিও বাড়ছে।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনজীবন স্বাভাবিক করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চলছে। তবে আন্দোলনকারীদের মতে, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবে দাবি পূরণের পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকে। বর্তমানে ইসলামাবাদ সরকারের উপর চাপ বাড়ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিক্ষোভের এই ধারাবাহিকতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ দমন করা কঠিন হচ্ছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট ও প্রশাসনিক বৈষম্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অশান্তি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন