পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ করের (৫৭) আত্মহত্যাকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে এখন জোর বিতর্ক। শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির সম্মতিপ্রাপ্ত 'স্টেট ইনিশিয়েটিভ রেজিস্টার' বা SIR এবং NRC-এর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই প্রৌঢ়। এমনকী মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া 'সুইসাইড নোটেও' সেই কথা লেখা ছিল বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার প্রদীপের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে সেই সুইসাইড নোটের সত্যতা নিয়েই এখন একাধিক প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, প্রদীপ কর আদৌ লিখতে পারতেন কি না, সেই বিষয়টিই সন্দেহজনক। মৃতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রদীপ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, ১৯৮০ সালের একটি দুর্ঘটনায় তাঁর ডান হাতের চারটি আঙুল কাটা পড়ে। যদিও তিনি বাঁ হাতে লিখতেন কি না, সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি। ফলে 'নিরক্ষর' প্রদীপের হাতের ৪ আঙুল না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সুইসাইড নোটটি লেখা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব পানিহাটির এই ঘটনায় সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও এই প্রসঙ্গে বলেন, "যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সুইসাইড নোটটি কে লিখেছেন তা জানা দরকার। NRC তো চালুই হয়নি। NRC নিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল।" রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই সুইসাইড নোটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদীপের অকালমৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
মৃত প্রদীপ কর অবিবাহিত ছিলেন এবং ভাই ও ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমবার রাতে তিনি নিজের ঘরে শুতে যান এবং মঙ্গলবার সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ মৃতদেহ এবং 'বিতর্কিত' সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করে। প্রদীপের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও মেলেনি। পরিবার জানিয়েছে, তিনি পানিহাটি বিধানসভার ভোটার ছিলেন এবং ২০২৪ সালেও ভোট দিয়েছেন। তবে তাঁর বাবা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সবার নজর সুইসাইড নোটের রহস্য উদঘাটনের দিকেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন