Top News

প্রো কাবাডি লিগ ২০২৫ ফাইনাল: দাবাং দিল্লি বনাম পুনেরি পল্টন - কে তুলবে এবারের শিরোপা?

 

ইতিহাস: গ্রামীণ ক্রীড়া থেকে বিশ্বজনীন মঞ্চে

ভারতের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলির মধ্যে অন্যতম কাবাডি, ২০১৪ সালে আধুনিক রূপে জন্ম নেয় প্রো কাবাডি লিগ (পিকেএল)। প্রথম মৌসুমে আটটি দল অংশ নিয়েছিল, আর তখন থেকেই কাবাডি পেয়েছিল টেলিভিশন এবং ডিজিটাল যুগের পূর্ণ সমর্থন। আজ, ২০২৫ সালে, পিকেএল তার দ্বাদশ আসরে পৌঁছে গেছে, যা প্রমাণ করে যে এই লিগ এখন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় স্পোর্টস ইভেন্ট।

টুর্নামেন্ট সারসংক্ষেপ: ২০২৫ মৌসুমের ছবি

দ্বাদশ মৌসুমের সূচনা হয়েছিল ২৯ আগস্ট ২০২৫-এ। ১২টি দল অংশগ্রহণ করে ডাবল রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রতিটি দল খেলেছে ১৮টি ম্যাচ, ফলে মোট ১১৭টি ম্যাচে টানটান লড়াই দেখা যায়।

এই মৌসুমের উজ্জ্বল মুখ ছিলেন আয়ান লোচাব, তিনি ৩২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার ও ৩১৬ রেইড পয়েন্ট সংগ্রাহক। অন্যদিকে নবদীপ সিং সর্বাধিক ৭৩ ট্যাকল পয়েন্ট নিয়ে রক্ষণের শিরোপা জিতেছেন।

পুরো মৌসুম জুড়ে টেলিকাস্ট করেছে স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক, এবং লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দর্শকদের উত্তেজনা ধরে রাখতে দায়িত্ব নিয়েছে জিওহটস্টার। দেশজুড়ে চারটি ইনডোর স্টেডিয়ামে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে - বিশাখাপত্তনম, জয়পুর, চেন্নাই ও নয়াদিল্লি।


অংশগ্রহণকারী দল ও প্রতিযোগিতার মান

২০২৫ মৌসুমে অংশ নেওয়া ১২টি দল হল —
দাবাং দিল্লি কেসি, পুনেরি পল্টন, বেঙ্গালুরু বুলস, হরিয়ানা স্টিলার্স, ইউ পি যোদ্ধা, তামিল থালাইভাস, পাটনা পাইরেটস, জয়পুর পিংক প্যান্থার্স, বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স, তেলেঙ্গানা টাইটানস, গুজরাট জায়ান্টস ও ইউ মুম্বা। 

দাবাং দিল্লি ও পুনেরি পল্টন শুরু থেকেই ছিল ধারাবাহিক। গ্রুপ পর্যায়ে দু’দলই ১৩ জয় ও ৫ পরাজয়ের মাধ্যমে ২৬ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

স্থান: চার শহরের কাবাডি উৎসব

এই মৌসুমের ‘ক্যারাভান ফরম্যাট’ অনুসারে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে চারটি ইনডোর স্টেডিয়ামে—

  1. রাজীব গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়াম, বিশাখাপত্তনম (২৯ আগস্ট–১১ সেপ্টেম্বর)
  2. সওয়াই মানসিং ইনডোর স্টেডিয়াম, জয়পুর (১২–২৭ সেপ্টেম্বর)
  3. এসডিএটি মাল্টিপারপাস ইনডোর স্টেডিয়াম, চেন্নাই (২৯ সেপ্টেম্বর–১২ অক্টোবর)
  4. থিয়াগরাজ ইনডোর স্টেডিয়াম, নয়াদিল্লি (১৩–২৩ অক্টোবর)

চারটি শহরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দর্শকদের অংশগ্রহণ ও টিভি দর্শকসংখ্যা, দুটিই ছিল অভূতপূর্ব।

গ্রুপ স্টেজ ও নকআউট রাউন্ড

লিগ পর্যায়ের ডাবল রাউন্ড রবিন শেষে শীর্ষ আট দল যায় প্লে-অফে। সেখান থেকে শুরু হয় প্লে-ইন, এলিমিনেটর, কোয়ালিফায়ার-১ ও ২, এবং শেষ পর্যন্ত গ্র্যান্ড ফাইনাল

গ্রুপ পর্যায়ে পুনেরি পল্টন ৪১–১৯ ব্যবধানে গুজরাট জায়ান্টসকে হারিয়ে বড় জয় তুলে নিয়েছিল। দিল্লির রাইডার আশু মালিক এক ম্যাচে একাই করেছিলেন ২০ রেইড পয়েন্ট, যা মৌসুমের সেরা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সগুলির মধ্যে অন্যতম।

প্লে-অফ রাউন্ডে দুই দলই তাদের প্রতিপক্ষকে শক্ত হাতে দমন করেছে। দিল্লি ও পুনে দুজনেই তাদের রক্ষণ ও রেইডিং-এর ভারসাম্য দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।

ফাইনাল প্রাকদর্শন: শেষ মঞ্চে দুই সমান প্রতিপক্ষ

সব চোখ এখন শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, রাত ৮টা-এর দিকে। ভারতের কাবাডি-প্রেমীরা প্রস্তুত দেশের দুই সেরা দলের সংঘর্ষ দেখার জন্য: দাবাং দিল্লি কেসি বনাম পুনেরি পল্টন

দাবাং দিল্লি কেসি
দলটি অভিজ্ঞতা ও স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল। তাদের রাইডার লাইন-আপে রয়েছে টেকনিক ও ধৈর্যের মিশ্রণ। মৌসুম জুড়ে তারা মানসিক দৃঢ়তা বজায় রেখেছে, বিশেষ করে টাইব্রেকার ম্যাচগুলোতে তাদের রক্ষণশৈলী ছিল দৃষ্টিনন্দন। পূর্ববর্তী মৌসুমের ফাইনালের অভিজ্ঞতাও এই দলকে আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।

পুনেরি পল্টন
পুনেরি পল্টন বরাবরই আক্রমণাত্মক কৌশলের জন্য পরিচিত। তাদের রেইডিং-বিভাগ এই মৌসুমে সবচেয়ে ধারাবাহিক ছিল। অধিনায়ক ফজল আত্রাচলি ও নবীন কুমারের নেতৃত্বে দলটি মানসিকভাবে একীভূত এবং প্রতিপক্ষের কৌশল ভাঙতে দক্ষ। নকআউট-পর্বে তাদের রক্ষণশক্তি ফাইনালে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।


মুখোমুখি পরিসংখ্যান

গ্রুপ স্টেজে দিল্লি ও পুনে মুখোমুখি হয়েছিল দুটি ম্যাচে, একটিতে দিল্লি জিতেছিল ৩৭–৩৪ ব্যবধানে, অন্যটি ৪৮–৪৮ সমতায় শেষ হয়েছিল। অর্থাৎ, দুই দলের শক্তির পার্থক্য কার্যত নেই।

উভয় দলের সেরা খেলোয়াড়:

  • দাবাং দিল্লি: আশু মালিক (গড়ে ১২.৬ রেইড পয়েন্ট), যোগেশ্বর গৌড় (ট্যাকল-সাফল্যের হার ৫৭%)
  • পুনেরি পল্টন: নবীন কুমার (মোট রেইড পয়েন্ট ২৮১), ফজল আত্রাচলি (ট্যাকল পয়েন্ট ৬৯)

এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে ফাইনালে সমান লড়াই হবে, যেখানে কিছু ক্ষুদ্র ভুলই নির্ধারণ করবে চ্যাম্পিয়ন কে হবে।

ফাইনালে নজর রাখার বিষয়

  1. রেইডার বনাম রক্ষণ: দিল্লির আশু মালিক ও পুনের নবীন কুমারের মধ্যে লড়াই হতে পারে ‘ম্যাচ- বিজয়ী’ নির্ধারণকারী।
  2. কৌশলগত পরিবর্তন: ফাইনালের মতো ম্যাচে কোচদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহূর্তের বদলি বা রিভিউ ব্যবহার ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।
  3. মানসিক চাপ: দর্শকের প্রত্যাশা, মিডিয়া আলোচনার চাপ, এবং স্টেডিয়ামের পরিবেশ, সবকিছুই খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে।
  4. গোল্ডেন রেইড সম্ভাবনা: গ্রুপ ম্যাচে টাইব্রেক দেখা গিয়েছিল, তাই এই ফাইনালেও গোল্ডেন রেইডে সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

দর্শক প্রত্যাশা ও বিশ্লেষণ

ফাইনালের আগে বিশ্লেষকরা বলেছেন যে এই দুই দল ভারতের কাবাডির ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করছে। দিল্লি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায়, পুনে চায় গতি ও চাপের খেলা। যে দল মাঝ-অর্ধে রক্ষণ শক্ত রাখবে ও শেষ পাঁচ মিনিটে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করবে, সেই দলই ট্রফি তুলতে পারে।

টিকিট ইতিমধ্যেই সব বিক্রি হয়ে গেছে, দর্শকেরা অপেক্ষায় এক রোমাঞ্চকর রাতের জন্য। টিভি ও ডিজিটাল দর্শকসংখ্যা ৪ কোটির ঘর ছুঁয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করছে আয়োজক সংস্থা।


প্রো কাবাডির ফাইনালে রঙিন রাতের প্রতীক্ষা

শুক্রবারের এই ফাইনাল কেবল একটি খেলার নয়, ভারতীয় ক্রীড়ার উদযাপন। দিল্লি ও পুনে, দুটি শহরের গর্ব আগামীকাল ময়দানে লড়বে জাতীয় গৌরবের জন্য।
রাইড পয়েন্ট, ট্যাকল, সুপার ১০, হাই ৫: সব মিলিয়ে এক রাতের উন্মাদনা নিশ্চিত।

কাবাডি প্রেমীদের জন্য বার্তা একটাই, রাত ৮টা থেকে চোখ রাখুন স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক ও জিওহটস্টারে, কারণ এই লড়াই ইতিহাসে স্থান করে নেবে।

শেষে প্রশ্ন একটাই —কে হবে প্রো কাবাডি লিগ ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন? দাবাং দিল্লির দৃঢ়তা, না কি পুনেরি পল্টনের আগ্রাসন? উত্তর মিলবে শুক্রবার রাতে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন