বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক অধ্যায় সূচনা হলো আজ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। একই মামলায় প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। তাঁদের দেশে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জমতে থাকে সাধারণ মানুষ, নিহতদের পরিবার ও সাংবাদিকরা। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণা শুরু করলে আদালত ঘরে নেমে আসে নীরবতা। জুলাই আন্দোলনে নিহতদের কয়েকজন পরিবারের সদস্য সামনে বসেছিলেন—কারও চোখে জল, কারও মুখে ক্ষোভ।
রাষ্ট্রপক্ষ রায়কে "ন্যায়বিচারের বিজয়" বলে স্বাগত জানালেও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা পুলিশের প্রাক্তন প্রধানের সাজার মাত্রা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনা রায় ঘোষণার মিনিট কয়েকের মধ্যেই এক বিবৃতি দিয়ে এটিকে "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" এবং "প্রতিশোধপরায়ণ" বলে দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মৃত্যুদণ্ড “রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই পরিণতি”। নিষিদ্ধ আওয়ামী লিগও রায়কে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছে।
ছবির উৎস - রয়টার্স
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনুস রায়কে “ঐতিহাসিক ও প্রয়োজনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন—এই রায়কে কেন্দ্র করে উসৃঙ্খলতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড যেন না ছড়ায়। বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামিও রায়কে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, “এই রায় আগামী দিনের স্বৈরাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা।” মামলার তদন্তে ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও–ভিডিও ফুটেজ, এবং গুলি–নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে—জুলাই আন্দোলনের সময় বিক্ষোভ দমনে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল পরিকল্পনাকারী ও আদেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল, তিনি ছিলেন "সুপিরিয়র কম্যান্ডার", যার অনুমতি ছাড়া কোনও সহিংস অভিযান পরিচালিত হয়নি। রায়ের পরপরই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে শেখ হাসিনা ও কামালকে দ্রুত বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করার জন্য। দুই দেশের বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—“ভারতের এটি পালনীয় দায়িত্ব।”
রায় ঘোষণার আগেই উত্তেজনা ছড়ায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এলাকায়। ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলা চারতলা বাড়ির জায়গায় খেলার মাঠ তৈরির দাবি তুলে একদল যুবক জড়ো হলে পুলিশ ও সেনার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ালেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন