‘ড্রিম গার্ল’ কেন বিবাহিত ধর্মেন্দ্রকে জীবনসঙ্গী করলেন? এক অসাধ্য সাধনের গল্প
রূপালী পর্দার প্রেম কি বাস্তবেও পরিণতি পায়? পেলে তা কতোটা মসৃণ হয়? বলিউডের ইতিহাসে এমন কিছু সম্পর্ক আছে যা সমস্ত সামাজিক রীতিনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের মতো করে পথ তৈরি করেছে। এমনই এক সম্পর্কের গল্প ধর্মেন্দ্র এবং 'ড্রিম গার্ল' হেমা মালিনীর। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া তাঁদের প্রেম কাহিনী আশি সালের মে মাসে এক নতুন মোড় নেয়। যখন হেমা মালিনী সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বিবাহিত ধর্মেন্দ্রকেই জীবনসঙ্গী করবেন, তখন সমাজের চোখ কপালে উঠেছিল! কিন্তু কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? কেনই বা তিনি সেই প্রথাগত 'সুখী গৃহকোণ'-এর স্বপ্নকে বিসর্জন দিলেন?
আসলে, ধর্মেন্দ্রর প্রথম বিবাহ হয়েছিল অনেক কম বয়সে, প্রকাশ কউরের সঙ্গে। তাঁদের চার সন্তান—সানি, ববি, বিজেতা এবং অজিতা। অন্যদিকে, দক্ষিণী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেওয়া হেমা মালিনী তখন বলিউডের একচ্ছত্র 'ড্রিম গার্ল', যাঁর জন্য বহু পুরুষ পাগল। 'তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান' ছবির সেটে প্রথম আলাপ, এরপর 'শোলে', 'সীতা অউর গীতা' সহ ৪০টিরও বেশি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের রসায়ন শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেও জীবন্ত হয়ে ওঠে। হেমা মালিনী তাঁর আত্মজীবনীতে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ধর্মেন্দ্রকে দেখে প্রথম দর্শনেই তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন, এমন সুদর্শন পুরুষ তিনি আগে দেখেননি। কিন্তু প্রথমদিকে এই সম্পর্ককে তিনি 'ভবিষ্যৎহীন' বলেই মনে করতেন, কারণ ধর্মেন্দ্র ছিলেন বিবাহিত।
হেমা মালিনীর পরিবারও এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না। মা জয়া চক্রবর্তী চেয়েছিলেন তিনি অভিনেতা জীতেন্দ্রর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। একসময় তো পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়েছিল যে জীতেন্দ্রর সাথে হেমার প্রায় বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল! কিন্তু সেই চরম মুহূর্তে, ভালোবাসার বাঁধন ছিন্ন করতে পারলেন না ধর্মেন্দ্র। শেষ মুহূর্তে চেন্নাই ছুটে গিয়ে তিনি হেমাকে বোঝান। শোনা যায়, এরপরই হেমা মালিনী কঠিন সিদ্ধান্ত নেন এবং ধর্মেন্দ্রকে সরাসরি বলেন—'এবার তোমাকে আমাকে বিয়ে করতেই হবে।' ধর্মেন্দ্র সেই প্রস্তাবে রাজি হন। কিন্তু সমস্যা ছিল—প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদ দিতে রাজি ছিলেন না।
ঠিক সেই কারণেই, নানা গুঞ্জন ও সমালোচনার মধ্যেই ১৯৮০ সালে হেমা মালিনী ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করেন। তখন থেকেই তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন করে 'দিলওয়ার' এবং 'আয়েশা বি' নামে 'নিকাহ' করার কথা শোনা যায়, যদিও ধর্মেন্দ্র পরে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিবাহ-পরবর্তী জীবনে তাঁদের পথচলা কখনোই প্রথাগত ছিল না। হেমা মালিনী স্বেচ্ছায় ধর্মেন্দ্রর প্রথম পরিবার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে, একটি 'অপ্রচলিত' জীবন বেছে নেন। তিনি কখনো ধর্মেন্দ্রর প্রথম পরিবারে হস্তক্ষেপ করেননি। তিনি নিজেই বলেছেন, 'কেউই এমন জীবন চায় না, কিন্তু পরিস্থিতি এমন করে তুললে মেনে নিতেই হয়।' তিনি যোগ করেন, 'আমার নিজস্ব দুটো সন্তান আছে, তাদের আমি ভালোভাবে মানুষ করেছি। ধর্মজি সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। এর বেশি আর কী চাই? আমার টাকা-সম্পত্তির প্রয়োজন নেই, কেবল একটু ভালোবাসা চাই।' হেমা মালিনীর এই সিদ্ধান্ত তাঁর চারপাশের সমস্ত আলোচনা-সমালোচনাকে এক লহমায় স্তব্ধ করে দেয়। বলিউডের এই প্রেম কাহিনী প্রমাণ করে যে ভালোবাসা সত্যিই কোনো বাঁধা মানে না—তা সে সমাজের নিয়মই হোক, আর জীবনের প্রথাগত পথই হোক। এই সম্পর্ক আজও বলিউডের অন্যতম 'অদ্ভুত অথচ সফল' প্রেম কাহিনীর প্রতীক হয়ে আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন