চাকরির বাজার এখন এমনই খারাপ যে মানুষ একটা সুযোগ পেলেই মরিয়া হয়ে ওঠে। আর এই দুর্বলতার সুযোগই নিচ্ছে প্রতারকরা! টালিগঞ্জের বুকে সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা শুনে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। মোটা বেতনের চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে ফাঁদ পাতা হয়েছিল এক ৫৬ বছর বয়সী অরুণের জন্য। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের বদলে অপেক্ষা করছিল এক নতুন আতঙ্ক। তিনি বুঝতেও পারেননি, চাকরির নামে প্রতারণার এক নতুন, ভয়ঙ্কর জালে তাঁকে জড়ানো হচ্ছে।
প্রথমে সব ঠিকঠাকই ছিল। ফেসবুক থেকে নম্বর পেয়ে অরুণ যোগাযোগ করলেন, ফোনে কথা হলো। তারপর এক জায়গায় ডেকে নিয়ে নেওয়া হলো তাঁর সব দরকারি কাগজপত্র। বলা হলো, ‘ম্যাডাম’ ফোন করে সব জানাবেন। কিছু দিন পর সেই 'ম্যাডাম' পরিচয় দিয়ে ফোন এল বটে, চাকরি পাকা হওয়ার খবরও দিলেন। কিন্তু এরপরই এলো আসল মোচড়! চাকরি পেতে হলে নাকি হেপাটাইটিস আর এইচআইভি পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হবে! এই শুনেই অরুণবাবুর সন্দেহ হলো। এমন কোন কাজ যার জন্য এই ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন? তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দিলেন, এমন চাকরি তাঁর চাই না। আর তক্ষুনি শুরু হলো হুমকি! জানানো হলো, তাঁর সব ফাইল নাকি সোজা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে!
হুমকি শুনেও অরুণবাবু চুপ ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার আবারও এল সেই ভয়ংকর ফোন। ওপার থেকে এক ব্যক্তি জানাল, টালিগঞ্জ থানায় তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, আর মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তাঁর বাড়িতে হানা দেবে! যদি পুলিশি ঝামেলা থেকে বাঁচতে চান, তবে এক্ষুনি নির্দিষ্ট এক অ্যাকাউন্টে সাড়ে সাত হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতে হবে! এই পুরো ঘটনার নাটকীয় মোড় এখানেই। টাকা দেওয়ার বদলে বুদ্ধিমানের মতো কাজ করলেন অরুণবাবু। তিনি সরাসরি টালিগঞ্জ থানায় গিয়ে যোগাযোগ করলেন, গোটা ঘটনার কথা পুলিশকে জানালেন এবং অভিযোগ দায়ের করলেন। এখন টালিগঞ্জ থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, আর এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল, চাকরির লোভ দেখিয়ে কীভাবে প্রতারকরা সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারির ভয় দেখিয়ে সর্বস্বান্ত করতে চাইছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন