বেঙ্গালুরুতে ২৯ বছর বয়সী এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা হয়েছে। এক স্বঘোষিত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক যৌন সমস্যার চিকিৎসার নামে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে অত্যন্ত দামি এবং ক্ষতিকর ভেষজ পণ্য বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এজন্য ইঞ্জিনিয়ারকে মোট ৪৮ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই ওষুধগুলি খেয়ে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে এবং কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় তিনি জ্ঞানভারতী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, অভিযোগকারী ইঞ্জিনিয়ার জ্ঞানভারতী এলাকায় থাকেন এবং শিবমোগ্গা জেলার বাসিন্দা। তিনি গত তিন বছর ধরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছেন। অভিযোগকারীর দাবি, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রথম কয়েক মাসে তাঁর যৌন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। তিনি কেঙ্গেরি এলাকার একটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান, যেখানে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কিছু ওষুধ দেন।
চলতি বছরের ৩ মে তারিখে, হাসপাতাল যাওয়ার পথে তিনি উল্লাল এলাকার ল কলেজের কাছে রাস্তার ধারে একটি আয়ুর্বেদিক তাঁবু দেখতে পান। সেখানে পোস্টারে যৌন সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি করা হয়েছিল। তিনি তাঁবুর ভেতরে গেলে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ইঞ্জিনিয়ার নিজের সমস্যার কথা তাঁকে জানালে, ওই ব্যক্তি বলেন যে 'বিজয় গুরুজি' খুব দ্রুত এর চিকিৎসা করতে পারেন এবং তিনি বিজয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করবেন।
বিজয় গুরুজির সঙ্গে দেখা:
খবর অনুযায়ী, ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁবুতে এক ব্যক্তি এসে নিজেকে বিজয় গুরুজি হিসেবে পরিচয় দেন। ইঞ্জিনিয়ারকে পরীক্ষা করার পর বিজয় বলেন, 'দেবরাজ বুটি' নামে একটি বিরল ওষুধেই তাঁর সমস্যার সমাধান হবে। তিনি ওই ওষুধ যশবন্তপুরের একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকান থেকে কিনতে বলেন। বিজয় বলেন, এই ওষুধ কেবল সেই দোকানেই পাওয়া যায় এবং এটি তিনি উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার থেকে আনেন।
তিনি আরও জানান, 'দেবরাজ বুটি'-এর এক গ্রামের দাম ১.৬ লাখ টাকা। ওষুধটি কেবল নগদ টাকায় কেনা যাবে এবং ইঞ্জিনিয়ারকে একাই যেতে হবে। তিনি সতর্ক করেন যে অন্য কেউ সঙ্গে গেলে ওষুধের শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
এরপর ওই ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি থেকে নগদ টাকা নিয়ে আয়ুর্বেদিক দোকান থেকে ওষুধ কিনে বিজয় গুরুজির কাছে ফিরে আসেন। স্বঘোষিত এই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক 'দেবরাজ বুটি' ব্যবহারের পদ্ধতি বাতলে দেন এবং সঙ্গে একটি বিশেষ ধরনের তেলও দেন। এই তেলের দাম ছিল প্রতি গ্রাম ৭৬,০০০ টাকা, আর তিনি ১৫ গ্রাম তেল কিনতে বলেন। ইঞ্জিনিয়ার প্রতি সপ্তাহে তাঁর স্ত্রী ও বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ১৫ গ্রাম তেল এবং অন্যান্য পণ্যের জন্য মোট ১৭ লাখ টাকা দেন।
চিকিৎসা পরীক্ষার রিপোর্টে উদ্বেগ:
এরপর বিজয় তাঁকে আরও ৩ গ্রাম 'দেবরাজ বুটি' কেনার জন্য চাপ দেন। প্রতি গ্রামের জন্য ১.৬ লাখ টাকা দাম চাওয়া হয়। ভুক্তভোগী ইঞ্জিনিয়ার ব্যাঙ্ক থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মোট ১৮ গ্রাম 'দেবরাজ বুটি' কেনেন। পরে তাঁকে 'দেবরাজ রসাবুটি' নামে আরেকটি ওষুধ কেনার জন্য রাজি করানো হয়, যার দাম ছিল প্রতি গ্রাম ২.৬ লাখ টাকা। এজন্য তিনি এক বন্ধুর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার নিয়ে চার গ্রাম 'দেবরাজ রসাবুটি' কেনেন। এভাবেই ওই আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকান থেকে মোট ৪৮ লাখ টাকা দিয়ে তিনি সমস্ত ওষুধ কেনেন।
সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করার পরেও কোনও উন্নতি হয়নি। বরং, চিকিৎসার জন্য রক্ত পরীক্ষা করালে জানা যায় তাঁর কিডনিতে সমস্যা শুরু হয়েছে। এখন অভিযোগকারীর দাবি, বিজয় গুরুজির দেওয়া ভেষজ ওষুধ সেবনের ফলেই তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হয়েছে। তিনি বিজয়, ওষুধের দোকানের মালিক এবং তাঁবুর ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন