২৬ নভেম্বর। একটি তারিখ, কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে আছে ভারতের ইতিহাসের দুই চরম বিপরীতমুখী ছবি—একটি ছবি গণতন্ত্রের সবথেকে বড় বিজয়ের, অন্যটি হিংসা ও সন্ত্রাসের সবথেকে বড় ক্ষতচিহ্ন। এই দিনটি একদিকে যেমন জাতির মেরুদণ্ড 'সংবিধান'কে বুকে টেনে নেওয়ার দিন, তেমনই এটি দেশের ওপর হওয়া এক জঘন্যতম আক্রমণের সাক্ষী।
১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর। দীর্ঘ আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ শেষে এই দিনেই ভারতের গণপরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছিল স্বাধীন দেশের পবিত্র সংবিধান। যে সংবিধানের জনক ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর—তাঁর নেতৃত্বেই দেশের নাগরিকেরা পেলেন সাম্য, স্বাধীনতা ও অধিকারের মূল ভিত্তি। এই দিনটিকেই তাই ২০১৫ সাল থেকে সরকারিভাবে 'সংবিধান দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক আদর্শের মূল শক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
অথচ, ঠিক ৫৯ বছর পর, ২০০৮ সালের সেই অভিশপ্ত ২৬ নভেম্বর তারিখে, এই মুম্বাই নগরীতেই নেমে এসেছিল মৃত্যুর বিভীষিকা। যে সংবিধানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল এই দিনেই, সেই সংবিধান প্রদত্ত আইন-শৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সাগরপথে প্রবেশ করেছিল ১০ জন জঙ্গি। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাসের রক্তস্নান থেকে শুরু করে তাজ হোটেল ও ওবেরয় হোটেলের রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকট—চার দিনের সেই তাণ্ডবে কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। ১৬৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু সেদিন দেশের কপালে এঁকে দিয়েছিল শোকের কালো টিকা। আজকের এই দিনে তাই ভারতবাসীর মনে দুটি ভাবনা পাশাপাশি হেঁটে চলে। একদিকে সংবিধানের শক্তি, যা আইনের শাসন আর মানবিক মর্যাদার কথা বলে; অন্যদিকে ২৬/১১-এর সেই ক্ষত, যা স্মরণ করিয়ে দেয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের চিরন্তন লড়াইয়ের কথা। ২৬ নভেম্বর শুধু একটি ক্যালেন্ডার তারিখ নয়; এটি আসলে ভারতের সহনশীলতা, গণতন্ত্রের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস এবং সমস্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার প্রতিজ্ঞার প্রতীক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন