দিল্লির লালকেল্লার কাছে হওয়া বিস্ফোরণের তদন্তে প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য, যা গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়া দিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এটি কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং সুপরিকল্পিত এক জঙ্গি ষড়যন্ত্রের অংশ। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত একটি মডিউল গোটা দেশে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল। এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করা ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করা।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই মডিউলের নেতৃত্বে ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের চিকিৎসক উমর নবি, যিনি দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণে নিহত হন। তাঁর সহযোগী ছিলেন পুলওয়ামার চিকিৎসক মুজাম্মিল আহমদ গনাই। এঁরা দু’জনেই ফরিদাবাদের আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিং ১৭-এর হোস্টেল রুম নম্বর ১৩ থেকেই নাকি গোটা ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়েছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ঘরটি ছিল জঙ্গি মডিউলের গোপন কেন্দ্র। যেখান থেকে হামলার নকশা তৈরি, বিস্ফোরক তৈরির পরীক্ষা ও যোগাযোগের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হত।ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বিল্ডিং ১৭-এর রুম ১৩ এবং পাশের ল্যাবরেটরিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট-ভিত্তিক রাসায়নিকের উপস্থিতি মিলেছে, যা সাধারণত বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সেই ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে পেনড্রাইভ, ল্যাপটপ, ডায়েরি ও কোডেড নোটবুক। নোটবুকে একাধিকবার ‘অপারেশন’ শব্দটি লেখা ছিল, যা পুলিশের মতে ৬ ডিসেম্বরের জন্য পরিকল্পিত হামলার ইঙ্গিত বহন করছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উমরের নেতৃত্বাধীন এই জঙ্গি গোষ্ঠী ৬ ডিসেম্বর তারিখটিকে বেছে নিয়েছিল, কারণ ওই দিনই বাবরি মসজিদ ভাঙার বার্ষিকী। সেই প্রতীকী দিনে দেশজুড়ে একাধিক ধর্মীয় স্থান, বড় শহরের জনবহুল এলাকা, রেলস্টেশন ও মলগুলিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। সূত্রের দাবি, অন্তত ২০০টি স্থানে হামলার নকশা তৈরি হয়েছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, হরিয়ানার নুহ ও গুরগাঁও এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক ও কার্তুজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন শহরে সদস্যদের পাঠিয়ে সম্ভাব্য টার্গেট এলাকায় নজরদারি চালানো হয়। প্রস্তুত বোমাগুলি বিভিন্ন সদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, যাতে ৬ ডিসেম্বর একযোগে হামলা চালানো যায়।
তদন্ত সংস্থার দাবি, ফরিদাবাদের আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুম ১৩ থেকেই দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের আগে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। উমর নবি একাধিকবার ওই ঘরে বৈঠক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের মতে, এখান থেকেই তাঁর গাড়িতে বিস্ফোরক মজুতের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। বিস্ফোরণের পর গাড়ির ভিতর থেকে উমরের দেহাবশেষ উদ্ধার হয়, এবং ডিএনএ পরীক্ষায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ভবন সিল করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে নথি, রাসায়নিক পদার্থ, নগদ টাকা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। শিক্ষা মন্ত্রক ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়েছে, কীভাবে এমন বিপজ্জনক কার্যকলাপ ক্যাম্পাসের ভিতরে ঘটতে পারল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তকারীদের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মী বা ছাত্রও হয়তো এই পরিকল্পনার বিষয়ে আগেই জানত।
এই ঘটনার পর দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে অভিযান শুরু হয়েছে। একাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে, তবে তদন্তকারীদের মতে, এই মডিউলের আরও কয়েকজন সদস্য এখনও পলাতক। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে, এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের পেছনে আন্তর্জাতিক স্তরে সক্রিয় জইশ নেতাদের হাত রয়েছে, যারা ভারতের অভ্যন্তরে ধর্মীয় অশান্তি সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চেয়েছিল। দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ধর্মীয় স্থানে বিশেষ নজরদারি চলছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন