Top News

বিতর্কের কেন্দ্রে দক্ষিণেশ্বর : মা ভবতারিণীর মন্দির কি সরকারি নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে?

কলকাতা তথা বিশ্বের বাঙালি ভক্তদের কাছে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির কেবল একটি তীর্থক্ষেত্র নয়, এটি আবেগ, ইতিহাস আর আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু। মা ভবতারিণীর এই মন্দিরেই সাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস সাধন করেছিলেন, আর রাণী রাসমণির হাতে এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৫৫ সালে। কিন্তু, এই বিশাল ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এবং পরিচালনার রাশ এখন এক চরম আইনি বিতর্কের মুখে।

 কলকাতা হাইকোর্টের দরবারে এই প্রশ্ন উঠেছে—এই মন্দির কি বেসরকারি ট্রাস্টের অধীনে থাকবে, নাকি এর রাশ তুলে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের হাতে? এই আইনি লড়াইয়ের মূলে রয়েছে মন্দির পরিচালনা কমিটি এবং ভক্তদের একাংশের বিতর্ক। দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব রাণী রাসমণির বংশধরদের হাতে থাকা ট্রাস্টের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, এই পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং মন্দির পরিচালনার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত করছে। বিভিন্ন মহলের দাবি, এই মন্দির এখন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সম্পদ এবং এর বিশাল আর্থিক লেনদেন, ভক্তদের ভিড় ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এই দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছে রাজ্যের দেবত্তর আইন।

এই আইনের আওতায়, যে সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সরকারি নজরদারি প্রয়োজন, সেখানে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য হাইকোর্ট একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এই কমিটিতে বিচার বিভাগের একজন প্রাক্তন সদস্য, রাজ্যের একজন উচ্চপদস্থ আমলা এবং একজন বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়েছে। তাদের কাজ হল মন্দিরের বর্তমান পরিচালনার পদ্ধতি, আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং ভক্তদের অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়া।

আদালতের এই হস্তক্ষেপের ফলে এখন গোটা দেশের ভক্তদের দৃষ্টি দক্ষিণেশ্বরের দিকে নিবদ্ধ। যদি হাইকোর্ট এই কমিটিকে দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে মন্দিরটিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পক্ষে রায় দেয়, তবে ১৮০০ সালের মাঝামাঝি থেকে চলে আসা মন্দির পরিচালনার ঐতিহ্যবাহী কাঠামোয় এক বিশাল পরিবর্তন আসবে। প্রশ্ন উঠছে, মন্দির সরকারি নিয়ন্ত্রণে এলে কি এর আধ্যাত্মিকতা ও প্রাচীন ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে, নাকি সরকারি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আরও কঠিন হয়ে উঠবে? মা ভবতারিণীর মন্দির শেষ পর্যন্ত কার হাতে থাকবে—ঐতিহ্যবাহী ট্রাস্ট না রাজ্য সরকার—সেই উত্তরের জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভক্তকূল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন