সাধারণত শীতকাল এলেই দেশের দূষণ-মানচিত্রে সবার আগে যার নাম ওঠে, তা হল ভারতের রাজধানী দিল্লি। কিন্তু এবার ছবিটা একেবারেই উলটো। এক চরম উদ্বেগের বার্তা নিয়ে দিল্লিকেও পিছনে ফেলে দূষণের শীর্ষে উঠে এল কলকাতা! সম্প্রতি, রাতের শহরে যখন পারদ নামছে, ঠিক তখনই এক ভয়ানক নীরব ঘাতকের মতো শহরের বাতাসের গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছাড়িয়ে গেল ৩০০-র গণ্ডি। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, এই মাত্রা 'খুব অস্বাস্থ্যকর' (Very Poor) থেকে 'গুরুতর' (Severe)শ্রেণির মধ্যে পড়ে, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চরম বিপজ্জনক।
বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়া এই ঘটনাটি ঘটেছিল শহরের 'ফুসফুস' নামে পরিচিত ময়দান এবং ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো এলাকায়। এক সময় যখন ময়দানের আশেপাশে AQI ছিল রীতিমতো ৩৪২, সেই একই সময়ে দিল্লির AQI ছিল ২৯৯। অর্থাৎ, কলকাতার তথাকথিত উন্মুক্ত এবং কম জনবসতিপূর্ণ এলাকাতেই দূষণের মাত্রা দেশের অন্যতম দূষিত শহর দিল্লিকে টপকে গেল। আর এটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ। যদি শহরের অপেক্ষাকৃত খোলা জায়গার এমন দশা হয়, তবে ঘনবসতিপূর্ণ এবং শিল্পাঞ্চল লাগোয়া এলাকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা ভাবলেই শিউরে উঠতে হচ্ছে।
এই মারাত্মক দূষণের জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করছেন পরিবেশ প্রযুক্তিবিদরা। তাঁদের মতে, শীতকালে আবহাওয়ার কারণে ধুলিকণা এবং অন্যান্য বিষাক্ত কণা মাটির কাছাকাছি স্তরে আটকে যায়, ফলে দূষণ বাড়ে। তার ওপর, শহরে লাগাতার চলমান মেট্রো ও অন্যান্য নির্মাণকাজের ধুলো ঠিকমতো না ঢেকে রাখলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। জল ছিটানোর অপ্রতুলতা, পুরনো ডিজেল চালিত গাড়ির চলাচল এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ—সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক বিষাক্ত ককটেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মানদণ্ডের তুলনায় এই দূষণের মাত্রা প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। এখনই যদি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে এই দূষণ ভবিষ্যতে কলকাতার বাসিন্দাদের ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রের জন্য এক মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে—এটাই এখন বিশেষজ্ঞদের কড়া হুঁশিয়ারি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন