এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতার জনজীবন জুড়ে যেন এক ত্রিফলা টেনশন—একদিকে চলছে নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারিতে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া, যা বহু মানুষের মনে নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্ক জাগিয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যের রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণাত্মক অবস্থান তৈরি করেছে তুমুল উত্তেজনা। আর এরই মাঝে, কলকাতার শীতের আমেজ হঠাৎ করেই হয়ে উঠছে অস্থির। এই তিন প্রধান ঘটনাপ্রবাহ রাজ্যবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে প্রতিটি মুহূর্তে।
'এসআইআর' (SIR) অর্থাৎ Special Intensive Revision একটি রুটিন প্রক্রিয়া হলেও, রাজ্যে এটি এখন এক গভীর আতঙ্কের নাম। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা পরিষ্করণ এবং হালনাগাদ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ শুরু হলেও, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এর অপব্যাখ্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র বিভ্রান্তি। বহু মানুষ এটিকে এনআরসি (NRC) বা নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন, যা বিশেষত সীমান্ত এলাকা এবং মতুয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে ভয় ধরিয়েছে। বিরোধী দলনেতা প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সিএএ বা এনআরসি-র কথা তুলে ইচ্ছাকৃতভাবে এসআইআর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এই আতঙ্কের জেরে অনেক জায়গায় ভোটাররা বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) কাছে এন্যুমারেশন ফর্ম জমা দিতে অস্বীকার করছেন। এর ফলস্বরূপ, বহু অনুপ্রবেশকারী সীমান্তের ওপারে ফেরত চলে গিয়েছেন বলে বিএসএফের তরফেও দাবি করা হয়েছে। এই আইনি এবং রাজনৈতিক জটিলতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মামলা গড়িয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
রাজনীতির ময়দানে মমতা: কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ
রাজ্যের রাজনীতি এখন অগ্নিগর্ভ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জেলা সফরগুলিতে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন। কিছুদিন আগে কোচবিহারে প্রশাসনিক সভার পর রাজনৈতিক জনসভা থেকে তিনি ওয়াকফ সংশোধনী বিল থেকে শুরু করে একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করা, এমনকি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) ব্যবহারের মতো একাধিক ইস্যুতে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রীর 'বঙ্কিমদা' সম্বোধন নিয়ে তিনি যে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন, তাতে রাজ্যের সংস্কৃতি ও আবেগকে রাজনীতির কেন্দ্রে আনার চেষ্টা স্পষ্ট হয়। তিনি বারবার রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করছেন যে, বাংলায় কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এক তীব্র জনমত তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন, যেখানে এসআইআর এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় পদক্ষেপগুলিই তাঁর প্রধান হাতিয়ার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন