পাহেলগাম (জম্মু ও কাশ্মীর), ২২ এপ্রিল: জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পাহেলগাম এলাকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৮ জন নিরীহ পর্যটক। গুরুতর জখম বহু, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহিলা ও শিশুরাও। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বায়সারান উপত্যকার কাছে একটি পর্যটকবাহী বাসে আচমকা হামলা চালায় প্রায় ছয় থেকে সাত জন মুখোশধারী জঙ্গি। তারা চারপাশ থেকে বাসটি ঘিরে ধরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলির ঘায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি গভীর খাদে পড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বাস খাদে পড়ার পরও প্রায় ১৫-২০ মিনিট ধরে গুলিবর্ষণ চালিয়ে যায় জঙ্গিরা, যাতে কোনও যাত্রী বেঁচে না যায়।
ধর্মীয় নিশানা করার অভিযোগ: এই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বেঁচে ফেরা মহিলা যাত্রী দাবি করেন, হামলাকারীরা যাত্রীদের নাম জিজ্ঞাসা করছিল এবং নাম শুনে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে গুলি চালাচ্ছিল। তাঁর মতে, এই হামলা পরিকল্পিত এবং হিন্দু তীর্থযাত্রীদের লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছিল। এদিকে, অন্যান্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমরনাথ যাত্রাপথেও একই দিনে হামলার ঘটনা ঘটে। বহু তীর্থযাত্রী আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যদিও প্রশাসন পৃথক হামলা হিসেবে ঘটনার তদন্ত করছে, তবে গোয়েন্দা মহলের মতে, এটি একটি সমন্বিত জঙ্গি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। শাহ স্বয়ং ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ও প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ঘটনার পর সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য জঙ্গি সংযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন হামলার দায় স্বীকার করেনি। সন্দেহ মতে , লস্কর-ই-তইবা বা তেহরিক-উল-মুজাহিদিন এই হামলার নেপথ্যে থাকতে পারে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিমান বাহিনীর সহায়তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা দেশজুড়ে উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি করেছে। কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ করে যেখানে ধর্মীয় ও পর্যটন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পর্যটন শিল্পের উপরে বড়সড় আঘাত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন