এ যে গান্ধী নয় , চিত্তরঞ্জন নয় - হিজলী বন্দীশালায় গুলিবর্ষণে প্রতিবাদী আকন্ঠ উদাত্ততা থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণ অভ্যুত্থানের ডাক - সালটা তখন ১৯৩১ - হয়তো রবিঠাকুর " কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো " পাঠ গ্রহণ করেন নি , তবে বুঝেছিলেন সমাজতত্বের অর্বাচীন সত্যকে।
" বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের একটি সত্যকে তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন যে - ১৯২৬ এর রক্তকরবী - সেই বিশুপাগল , নন্দিনী কিংবা রাজা , সবই ব্যার্থ মনোরথ সমাজতত্ত্ব এর ক্লেদাক্ত রসের কেশাগ্র থেকে বেরিয়ে আসা নিষ্পেষিত উত্তপ্ত আবেদন - যন্ত্রের নির্মম কাঠিন্য ও রুঢ়তার গ্লানিকে সোনায় পরিণত করার দোত্যনা শুনিয়ে যায় মানবজাতির পরশ্রীকাতরতা ও ব্যর্থতার বলি রেখাকে । তাই ১০০ বছর পূর্বে লিখিত সমাজতত্ত্বের এই নথিটি আজও এই যন্ত্রের যুপকাষ্ঠে দাঁড়িয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, কিছু আদৌ বদলায়নি , শুধু বদল এসেছে সময়ের আর কাঠামোতে ।
এসব তো গেল তত্ত্বকথা - তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে উপনীত হয়েও রক্তকরবী কতটা প্রাসঙ্গিক ? তাই তুলে ধরেছেন স্বনামধন্য টলি ও টেলি জগতের অন্যতম বিখ্যাত মুখ শ্রী চৈতি ঘোষালের পরিচালনার হাত ধরে । ছোটবেলা থেকে অভিনয়কে নিজের জীবনের সাথে জুড়েছিলেন তিনি , যদিও তিনি বলেন যে অভিনয় তাকে বেছে নিয়েছে । তবে দীর্ঘকাল সদর্পে অভিনয় জগতে বিরাজ করার পর এবার নাটক জগতে পরিচালনায় পদার্পণ , তাও তৃপ্তি মিত্রের সেই ছোট্ট নন্দিনী আজ নন্দিনী ঘোষাল । তিনি যে সবার কাছে আরো একবার পৌঁছে যেতে পেরেছেন তা উঠে এসেছে দর্শকদের একান্ত সাক্ষাৎকারে এবং করতালিতে। ২ ঘণ্টা টানা মঞ্চের চতুরঙ্গ কেঁপে ওঠার পরও তার আর কিছু বলার অবধি থাকে না । ভেসে উঠেছিল বিশু পাগলের মন মাতালো গান- " একদিকে ক্ষুদার চাবুক তৃষ্ণার চাবুক - বলছে কাজ করো" ( অমিত আচার্য ) রাজার অনুতপ্ত সুর - " আমি যৌবনকে মেরেছি - এতদিন ধরে আমার সমস্ত শক্তি নিয়ে যে কেবল যৌবনকেই মেরেছি " ।
নাটকের আলোকসজ্জা থেকে মঞ্চসজ্জা , নাচের মাধ্যমে পটভূমি বদল এবং ছোট্ট কুশলির ( ছোট্ট নন্দিনী ) ক্ষুদ্র অথচ মন ছুয়ে যাওয়া উপস্থিতি । সবশেষে " রক্তকরবী " নাটকদলকে জানাই অনেক অনেক ভালবাসা এবং আগামী শো গুলো যেন দর্শকরা সমান ভাবে উপভোগ করেন এই আশা রাখি ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন