চট্টগ্রামে জুন ও জুলাই মাসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই দুই মাসেই জেলায় ৯৮৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা সারা বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮৬৫ জন রোগীর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, যার মধ্যে ৬ জন চলতি জুলাই মাসেই মারা গেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ৩০ জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত একদিনেই ১০৯ জন নতুন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এবছরের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ। গত ৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৫ জন।
চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও গরম, মশা নিধনে অকার্যকর উদ্যোগ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব—এইসব কারণেই চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বর্তমান পরিস্থিতিকে "স্থানীয় প্রাদুর্ভাব" হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের ধারণা, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সংক্রমণ চলতে পারে।
১২ থেকে ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় (যেমন চট্টেশ্বরী রোড, ও আর নিজাম রোড, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর, ঝাউতলা) ‘র্যাপিড রেসপন্স টিম’ ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৬২টিতে এইডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করে।
ব্রুটো ইনডেক্স (BI) এর গড় ছিল ৭৫.২৯, যেখানে ২০-এর বেশি হলে এলাকাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, “এটিকে আঞ্চলিক আউটব্রেক বলা যায়। শুধুমাত্র নগরীতে নয়, বিভিন্ন উপজেলাতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও জানান, “এইডিস মশার ঘনত্ব বেশি থাকায় চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বেশি হচ্ছে। সাধারণত একটি ভাইরাস (যেমন ডেঙ্গু) বাড়লে আরেকটি কমে, তাই ডেঙ্গুর তুলনায় এখন চিকুনগুনিয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-এর অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, “ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ভিন্ন হলেও বাহক একই—এইডিস মশা। জলবায়ু ও পরিবেশগত ভারসাম্য এই সংক্রমণের প্রবণতায় ভূমিকা রাখছে। তবে নিশ্চিত হতে গবেষণা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪০% চিকুনগুনিয়ার রোগী। তবে মৃত্যুর হার ডেঙ্গুর তুলনায় কম। তবুও সংক্রমণের পর দীর্ঘমেয়াদি জয়েন্ট ব্যথা থেকে যেতে পারে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সরকারি হাসপাতালে এখনো চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, ফলে রোগীদের প্রাইভেট ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল।
অবকাঠামোগত দুর্বলতা যেমন—নগরায়নের পরও সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন না থাকা এবং আবর্জনার স্তূপ—মশার বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এতে শুধু শহরেই নয়, উপজেলাগুলোতেও মশাবাহিত রোগের বিস্তার বাড়ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ২৪ জুলাই থেকে ২৬ দিনব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন