রাজ্য বিজেপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন শমীক ভট্টাচার্য। 'বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়'- তাঁর এই প্রথম মন্তব্যেই যখন বঙ্গ রাজনীতি সরগরম, তখনই আরও এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন তিনি।
এবার শমীক সরাসরি বললেন, “যদি মুসলিম ভাইরা ভোট না-ও দেন, তা হলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিসর্জন ঘটিয়ে দেব।”
সংখ্যালঘু ভোট ও শমীকের নতুন সুর
বৃহস্পতিবার এক সভায় শমীক ভট্টাচার্যের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর আগে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে তাঁর নরম সুরের মন্তব্যকে অনেকেই বিজেপির কৌশল পরিবর্তন হিসেবে দেখছিলেন। কিন্তু এবার তিনি আরও স্পষ্ট করে দিলেন যে, সংখ্যালঘু ভোটের জন্য কোনো বিশেষ আবেদন তাদের নেই। তাঁর এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে- শমীকের এই সুর কি বিজেপির পুরনো অবস্থানের দিকেই ইঙ্গিত করছে, নাকি এটি তৃণমূলকে কোণঠাসা করার নতুন কৌশল?
ফিরহাদ হাকিম ও ‘মুসলিম রাজনীতি’র কড়া সমালোচনা
শমীক ভট্টাচার্য এদিন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে (ববি হাকিম) তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “ববি হাকিমদের রাজনীতি, মুসলমানকে মুসলমান বানিয়ে রাখার। মুসলমানকে মনুষ্যত্বের মর্যাদা না দিয়ে তাঁদের ভোটার বানিয়ে রাখার রাজনীতি।”
তিনি মুসলিমদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, “মুসলমানদের চিন্তা করতে বলেছি, ববি হাকিমের মেয়েরা কোন স্কুলে পড়েছে, কোন কলেজে পড়েছে। সিদ্দিকুল্লাদের সন্তানরা কোথায় পড়েছেন? যাঁরা মুসলিমদের আবেগ নিয়ে রাজনীতি করেন, তাঁরা চিন্তা করুন, তাঁদের বাড়িতে সন্তানসন্ততি কত, নেতা যাঁরা আছেন, তাঁদের সন্তানসন্ততি কত, কোথায় পড়াশোনা করেছেন। একজন মুসলমান নেতার নাম বলুন, যাঁরা মাদ্রাসায় পড়েছেন।”
শমীক ববি হাকিমের দুর্গাপূজা করা নিয়েও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “ববি হাকিম তো দুর্গাপুজো করেন। নামাজি হিন্দু। এত বড় দুর্গাপুজো আবার তারও সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলিম।”
আগের মন্তব্য এবং ‘নতুন বাংলা’র স্বপ্ন
রাজ্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বক্তৃতায় শমীক ভট্টাচার্য মুসলিম ভোট প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “যাঁরা আমাদের ভোট দিচ্ছেন না, যাঁরা আমাদের থেকে দূরে থাকছেন, যদি মনে করেন বিজেপি অস্পৃশ্য, অচ্ছ্যুত, আমাদের ভোট দেবেন না। কিন্তু তাঁরা আয়নায় নিজেদের দিকে দেখুন। গত ৩ বছরে যত খুন হয়েছে মুসলমানের সংখ্যা কত, ৯০ শতাংশ মুসলমান খুন, মরছে মুসলমান, মারছে মুসলমান। আর তাঁদের পরিবার বলছে সিবিআই তদন্ত চায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায়।”
তাঁর ‘নতুন বাংলা’র স্বপ্ন প্রসঙ্গে শমীক আরও বলেছিলেন, তিনি এমন বাংলা চান যেখানে দুর্গাপূজার বিসর্জনের শোভাযাত্রা ও মহরমের মিছিল একই সঙ্গে যাবে। শমীকের এই মন্তব্যের পর রাজ্যের রাজনীতিতে আগামী দিনে সংখ্যালঘু ভোট এবং ধর্মীয় মেরুকরণ নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন