নারী সুরক্ষা বাড়াতে এবার বড়সড় উদ্যোগ নিল রাজ্যের পরিবহণ দফতর এবং কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। শহরের মহিলা চালক ও মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বুধবার কলকাতা পুলিশের আধিকারিক ও পরিবহণ দফতরের কর্তারা বৈঠকে বসেন বেসরকারি পরিবহন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওলা ক্যাব সংস্থার প্রতিনিধিরাও।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে দুটি জরুরি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হচ্ছে। নম্বর দুটি হল - ০৩৩-১৯১২ এবং ০৩৩-১০৯১। এই নম্বর গুলি স্টিকারের আকারে ছাপিয়ে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি বাস, ওলা ক্যাব ও ট্যাক্সিতে লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে যাত্রী এবং চালক, বিশেষ করে নারীরা যেকোনো বিপদের মুহূর্তে সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
এছাড়াও রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চালক বা যাত্রী কেউ সমস্যায় পড়লে এই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে সরাসরি লালবাজার কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে শহরের সমস্ত রাস্তায়, বিশেষ করে রাত্রিকালীন সময়ে, নারীদের নিরাপত্তা আরও দৃঢ় হবে বলেই মনে করছে পরিবহণ দফতর। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, হেল্পলাইন নম্বরের প্রচার এফএম রেডিওর মাধ্যমেও করা হবে, যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ এই পরিষেবা সম্পর্কে সচেতন হন।
বর্তমানে শহরে একাধিক মহিলা বাস, ট্যাক্সি এবং বাইক চালক রয়েছেন, যারা রোজই রাস্তায় নামছেন। বহু মহিলা চালক জানিয়েছেন, অনেক সময় পথেঘাটে তারা নানা সমস্যায় পড়েন। কখনও যাত্রীদের দুর্ব্যবহার, কখনও শ্লীলতাহানির ঘটনা তাদের আতঙ্কিত করে তোলে। সম্প্রতি এমন বেশ কিছু অভিযোগও সামনে এসেছে, যা প্রশাসনের নজরে আসে। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই পুলিশ ও পরিবহণ দফতর যৌথভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
ওলা ক্যাবের এক মহিলা চালক জানালেন, "রাত্রে ডিউটি করতে গিয়ে বহুবার আমরা হেনস্থার শিকার হয়েছি। পুলিশের এই নতুন উদ্যোগ আমাদের সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।" এক মহিলা যাত্রী বললেন, "এই হেল্পলাইন নম্বর গাড়িতে থাকলে অনেকটাই নিশ্চিন্তে যাতায়াত করা যাবে।"
পরিবহণ দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্গাপূজোর আগেই এই নতুন ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হবে শহরজুড়ে। সমস্ত বাস ও ক্যাবে স্টিকার লাগানোর কাজ শুরু হবে শীঘ্রই।
সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নারী নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যে প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিশেষ করে নারীদের রাতের কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত বা পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই ধরনের ব্যবস্থা সময়ের দাবী বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই উদ্যোগ শুধু এক টুকরো স্টিকার নয়, বরং নারীদের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক - এমনটাই মনে করছেন শহরবাসী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন