Top News

শান্তা পাল কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়, ভারত-নেপাল-চিন সীমান্তে ভিডিও ধারণ, গোয়েন্দাদের সন্দেহের তির গুপ্তচরবৃত্তির দিকে!

 


যুবতী শান্তা পালকে নিয়ে লালবাজারের গোয়েন্দা জালে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাকে যত জেরা করা হচ্ছে, ততই তার রহস্যময় কার্যকলাপের নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে শান্তা পাল ভারত-নেপাল-চিন সীমান্তে গিয়ে সংবেদনশীল এলাকার ভিডিও ধারণ করেছিলেন।


এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি তিনি জ্যোতি মালহোত্রার মতো একজন গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছিলেন? যদিও জ্যোতি মালহোত্রা ভারতীয় নাগরিক হয়েও পাকিস্তানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করতেন বলে প্রমাণিত হয়েছিল, শান্তা পাল কোন দেশের হয়ে কাজ করছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়ে গভীর তদন্তে নেমেছে।


বাংলাদেশি যোগ ও জাল ভারতীয় নথি

গত সোমবার কলকাতার গল্ফগ্রিনের একটি ফ্ল্যাট থেকে শান্তাকে গ্রেফতার করে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ। পাসপোর্টের আবেদনের সময় তার দেওয়া নথিগুলিতে অসঙ্গতি থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করতেই পুলিশ একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়। গ্রেফতারের সময় শান্তার ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশের একাধিক নথি উদ্ধার হয়।


তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক এবং ২০২৩ সালে ভারতে এসেছিলেন। এরপর থেকে তিনি এক সঙ্গীর সঙ্গে এখানেই রয়ে গেছেন। কিন্তু তার পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে তিনি দালালচক্রের মাধ্যমে আধার কার্ড, রেশন কার্ডসহ বিভিন্ন ভারতীয় নথি তৈরি করেন। আধার কার্ডটি বর্ধমানের হলেও, অন্যান্য নথিগুলি পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার বলে জানা গেছে।


সামাজিক মাধ্যমে ভিসা ব্যবসা ও ভ্রমণ ভ্লগিং

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা শান্তা পালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলিও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখেছেন। সেখান থেকে আরও বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। লালবাজার সূত্র অনুযায়ী, তার সামাজিক মাধ্যমের পেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি ভারতে ভিসা পেতে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। বিশেষ করে গত আগস্টের পর যখন বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যটন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি এদেশে আসার জন্য মেডিকেল ভিসার আবেদন করার পরামর্শ দিতেন।


লালবাজার সূত্রে আরও জানা গেছে, শান্তা ‘আসান ট্র্যাভেলস কলকাতা অ্যান্ড বাংলাদেশ’ নামে সামাজিক মাধ্যমে একটি পেজ খুলেছিলেন এবং সেখানে নিজের পর্যটন ব্যবসার প্রচার চালাচ্ছিলেন। এর পাশাপাশি, একটি হোটেল খোলার জন্য তিনি ভারতের কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন কিনা, ধৃতের ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন।


এছাড়াও, তার সামাজিক মাধ্যমের ছবি ও ভিডিও পোস্ট থেকে জানা গেছে যে তিনি দিঘা, সিকিমের গ্যাংটকসহ ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানে ভ্রমণ করেছেন। একজন ট্র্যাভেল ভ্লগার হিসেবে তিনি নাথু লা-ও গিয়েছিলেন এবং সেখানেই ভারত-নেপাল-চিন সীমান্তের ছবি ও ভিডিও তুলেছিলেন।


জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে সাদৃশ্য: বাড়ছে গুপ্তচরবৃত্তির জল্পনা

তদন্তকারীরা শান্তার এই ভ্রমণ প্যাটার্নের সঙ্গে জ্যোতি মালহোত্রার কার্যপদ্ধতির মিল খুঁজে পাচ্ছেন। জ্যোতিও একইভাবে ট্র্যাভেল ভ্লগার সেজে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন এবং তার তোলা ছবি ও ভিডিও পাকিস্তানে পাচার করতেন বলে পরবর্তীতে জানা গিয়েছিল, কারণ তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন। শান্তা পালও কি তাহলে কোনো বিদেশি শক্তির গুপ্তচর? এই প্রশ্নই এখন কলকাতা পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় ধাঁধা।


যদিও কলকাতা পুলিশ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেছেন, “শান্তা পালকে যতই জেরা করা হচ্ছে, তার কাছ থেকে ততই গুরুত্বপূর্ণ নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে, যা চমকে দেওয়ার মতো। আরও ভালোভাবে গোটা বিষয়গুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যাচাই করা প্রয়োজন রয়েছে।” এই রহস্য উদঘাটনে পুলিশ গভীর মনোযোগ দিয়েছে, কারণ এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত থাকতে পারে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন