ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে প্রার্থীদের ব্যস্ততা। এবার ডাকসুর ২৮টি পদে মোট ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকসু নির্বাচনে মোট ৬৫৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪৯টি জমা পড়েনি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং ২৬ আগস্ট বিকেল ৪টায় চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে ভোটগ্রহণ শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত। ভোট হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর।
ডাকসুর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদের ২৩৪টি পদেও নির্বাচন হবে। এ জন্য মোট ১,৪২৭টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল, যার মধ্যে জমা পড়েছে ১,১০৯টি। বাকিগুলো জমা পড়েনি। ফলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে, তেমনি প্রতিটি হলে চলছে প্রস্তুতি।
শীর্ষ তিন পদে (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহ–সাধারণ সম্পাদক) প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠতে পারে অন্তত পাঁচটি শক্তিশালী প্যানেলের মধ্যে। এগুলো হলো—
-
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
-
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ (গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ)
-
প্রতিরোধ পর্ষদ
-
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য
-
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট (ইসলামী ছাত্রশিবির)
এ ছাড়া আরও কয়েকটি সংগঠন ও জোট প্রার্থী দিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে— অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪ (বামপন্থী প্যানেল), ডিইউ ফার্স্ট (স্বতন্ত্র), ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ (ছাত্র অধিকার পরিষদ), ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য। ফলে নির্বাচন ঘিরে বৈচিত্র্যময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।
দলীয় বা জোটভিত্তিক প্রার্থীর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম জুলিয়াস সিজার তালুকদার। তিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়। তাই তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা–সমালোচনা দুই-ই চলছে।
প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা এবং হলে হলে আলোচনা–সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস এখন নির্বাচনী আমেজে মুখর। ছাত্র সংগঠনগুলো আলাদা আলাদা ইশতেহার প্রণয়ন করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। ওই নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছিলেন নুরুল হক নুর (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ; বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ)। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন গোলাম রাব্বানী (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) এবং সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী হয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ)। সেই নির্বাচন ঘিরেও ব্যাপক উত্তেজনা, বিতর্ক ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আবারও সারা দেশের নজর থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবারকার নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে, সেটিই এখন সবার মূল আগ্রহের বিষয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন