বাংলাদেশের প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও “লালন গীতি” শিল্পজগতের অম্লান প্রতীক ফরিদা পারভীন আর নেই। শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে দেশ-বিদেশে সংস্কৃতি প্রেমীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, কয়েক দিন ধরে পারভীনের তার কিডনির সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতায় অবস্থার অবনতি ঘটে। মোটামুটিভাবে প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করছিলেন। শনিবার চিকিৎসকেরা সর্বশেষ জীবাণুমুক্ত অবস্থায় তাকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখেন, তবে তাতে আর কোনও উপকার হয়নি।
তিনি ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৪ সালে নওতারায় জন্ম, পরে কুষ্টিয়ায় বড় হয়েছেন। ১৯৬৮ সালে মাত্র জাতীয় রেডিওতে কাজ শুরু করেন। ঝাঁকে ঝাঁকে জনপ্রিয় গান ও লোকগানের কথা থাকলেও তার সবচেয়ে বেশি পরিচিতি হয় লালন সংগীতে। ‘Khachar Bhitor Ochin Pakhi’, ‘Barir Kache Arshinagar’ সহ অসংখ্য লালন গীত আলোকিত করেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে একুশে পদক; ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রে ‘অন্ধ প্রেম’ ছবির “নিন্দার কাতা” গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার; ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার।
পারভীনের মরদেহ আজ (রবিবার) কুষ্টিয়ায় তার নিবাসে অপূর্ণ শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে সমাহিত করা হবে। ঢাকা শহীদ মিনার, তেজগাঁও তাজকুনি পারা মসজিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নানান শ্রদ্ধাদি অনুষ্ঠানের পর মরদেহ কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর সংবাদে শোক প্রকাশ করছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চ, শিল্পী এবং সাধারণ মানুষ। দেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠাগুলো তাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাঁর কথা, তাঁর গান ও তাঁর চেতনা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে সংগ্রহ ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
ফরিদা পারভীনের কণ্ঠরহস্য, লালন সংগীতের আত্মার উপস্থাপক তাঁর গান আজীবন বেঁচে থাকবে। বাংলাদেশের লোকসংগীত চর্চার ইতিহাসে তিনি হয়ে উঠেছিলেন একটি কিংবদন্তি, আর তাঁর প্রয়াণ আমাদের জন্য এক সর্বমিলিত শোক ও সম্মান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন